আপনি কি ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করছেন?
অনলাইন ট্রান্সফারের মাধ্যমে আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বৈদেশিক মুদ্রা জমা হয়?
এখন আপনি ভাবছেন এই অর্জিত আয়ের উপর আপনাকে আয়কর দিতে হবে কিনা? বা এই আয় আপনার আয়কর বিবরণীতে কিভাবে দেখাবেন?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর শুধু আপনি না, আপনার মতো যারা বাংলাদেশে থেকে বাইরের দেশের কাজ অনলাইনে করে দিচ্ছেন এবং অনলাইনে পারিশ্রমিক পাচ্ছেন তাদের সবারই।
ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কারা কাজ করে থাকেন?
এক তথ্য মতে বাংলাদেশে বর্তমানে ৫৫০,০০০ ফ্রিল্যান্সার আছেন এবং ৭০০ ই-কমার্স ওয়েবসাইট আছে।
তাদের প্রতি বছরে আয়ের অংক বিশাল।
২০১৩ সালের হিসেব মতে কেবল আপওয়ার্ক ওয়েবসাইটেই বাংলাদেশী ফ্রিল্যান্সার কাজ করে আয় করেছেন ২১ মিলিয়ন ইউএস ডলার।
বুঝতেই পারছেন আমাদের দেশের তরুণ ফ্রিল্যান্সার যাদের বয়স ১৮ থেকে ৩৫ এর মধ্যে তারা কতো বিশাল অংকের বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করেছেন ।
ফ্রিল্যান্স হিসেবে কাজের সুবিধা হলো দিনের যেকোন সময় শুধু একটা কম্পিউটার এবং সাথে ইন্টারনেট কানেকশন থাকলেই বাইরের দেশের যে কোন কাজ করা যায়। তবে ইংরেজি জানাটা খুবই দরকার। যেহেতু বাইরের দেশের ক্লাইন্টের সাথে যোগাযোগটা ইংরেজিতেই করতে হয়।
একজন ছাত্র যেমন তার পড়ালেখার ফাকে কাজ করতে পারেন আবার তেমনি একজন গৃহিণীও তার বাসার কাজের ফাকে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করে বাড়তি আয় করতে পারেন।
আর যারা বেকার তারা চাইলে সারাদিনই ফ্রিল্যান্স ওয়েবসাইটগুলোতে কাজ করে আয় করতে পারেন।
বাংলাদেশে যারা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করেন তাদের কাছে জনপ্রিয় হলো আপওয়ার্ক এবং ফিভর।
ফ্রিল্যান্সার টাকা তুলতে গেলে কি কি সমস্যার সম্মুখীন হন?
এখন প্রশ্ন হলো কাজ করে দেশে টাকা নিয়ে আসতে হবে। কিন্তু অনলাইনে টাকা আছে। ব্যাংক থেকে সেই টাকা তুলতে গেলে প্রায়ই সমস্যায় পড়ে থাকেন বলে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে যারা কাজ করেন তারা অভিযোগ করে থাকেন।
এতো পরিশ্রম করার পর ব্যাংক থেকে টাকাটা দ্রুত উত্তোলন করতে চাইবেন এটাই স্বাভাবিক।
বাংলাদেশে যারা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করেন তারা মূলত যে অনলাইন গেটওয়ের মাধ্যমে বা মাধ্যম ব্যবহার করে বৈদেশিক মুদ্রা পেয়ে থাকেন তার সবগুলো বাংলাদেশে অনুমোদিত না।
তাই সেসব মাধ্যমে যখন কোন বৈদেশিক মুদ্রা আসে তখন একজন ফ্রিল্যান্সার ঝামেলায় পড়েন।
যেমন অনেকেই পেপাল এর কথা বলে থাকেন। পেপাল এর মাধ্যমে তাদের বৈদেশিক মুদ্রা আসে। কিন্তু বাংলাদেশে কোন ব্যাংকের সাথে তাদের চুক্তি না থাকার কারনে সেই টাকা তুলতে সমস্যা হয়।
গত মার্চ মাসে খবর বেরিয়েছিলো সোনালি ব্যাংক লিমিটেড এর সাথে পেপেল এর চুক্তি হতে যাচ্ছে। এর ফলে যারা এর মাধ্যমে টাকা নিয়ে আসবেন তারা খুব সহজেই এই টাকা নিজের ব্যাংকের মাধ্যমে তুলতে পারবেন।
তখন শুনা গিয়েছিলো গত এপ্রিল মাসের শেষের দিকে তারা সেবা দিতে পারবে। কিন্তু জুলাই মাস চলে গেলেও তাদের অগ্রগতি কতোটুকু হয়েছে তা এখনো জানা যায়নি।
বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের পরে বৈধ পথে সে অর্থ নিয়ে আসতে না পারলে পরে আইনি ঝামেলায় পড়তে হতে পারে সেই ভয়ে অনেকেই থাকেন। কিন্তু উপার্জিত অর্থ না এনেও উপায় নেই। তখন তারা কি করবেন?
এই চিন্তায় থাকেন অনেকেই। আবার অবৈধ পথে টাকা নিয়ে আসলে যেমন ঝুকি থাকে তেমনি আয়কর বিবরণীতে দেখানোর কোন উপযুক্ত খাতও খুজে পান না।
এবং সেই আয় থেকে আয়কর সুবিধাও নিতে পারেন না।
যেমন প্রায়ই শুনে থাকি হুন্ডির কথা। এটা অবৈধ। কিন্তু তারপরও এটা হয়েই যাচ্ছে।
এইগুলো বন্ধ করার জন্য সরকারকে বৈধ পথ খুলে দিতে হবে। সহজতর এবং দ্রুততর করতে হবে। আর রেমিটেন্স পাঠানোর খরচ কমাতে হবে।
সরকার গার্মেন্ট ব্যবসায়ীদেরকে নগদ প্রণোদনা দিয়ে থাকে। ফরেইন রেমিটেন্স রিজার্ভ ভালো রাখার জন্য সরকার এই কাজ করে থাকে।
এখন যারা বিদেশে কাজ করেন বা বাংলাদেশে থেকে অনলাইনে কাজ করে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে নিয়ে এসে ফরেইন কারেন্সি রিজার্ভ বাড়াচ্ছেন তাদেরকে কেনো উল্টো টাকা খরচ করে দেশে পাঠাতে হবে?
এই প্রশ্ন করতেই পারেন।
কিভাবে উপার্জিত অর্থ দেশে নিয়ে আসবেন?
আয়কর অব্যাহতি পাওয়ার জন্য আপনাকে অবশ্যই বৈদেশিক মুদ্রা ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করে দেশে নিয়ে আসতে হবে।
তবে অনেকেই অভিযোগ করে থাকেন টাকা ব্যাংক থেকে তুলতে গেলে তারা বিভিন্ন ধরনের প্রশ্নের সম্মুখীন হন।
কেন টাকা এসেছে? কোথা থেকে এসেছে? কে পাঠিয়েছে?
এবং বিভিন্ন ধরনের কাগজপত্র চেয়ে থাকেন ব্যাংকাররা।
এটার কারন হলো বর্তমানে বিভিন্ন দেশে জঙ্গি অর্থায়ন রুখতে এই ধরনের কিছু বাড়তি নিরাপত্তা নিয়ে থাকেন ব্যাংকাররা।
তাই যারা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করেন তারা আগে থেকেই যোগাযোগ করে নিতে পারেন যারা আগে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করছেন তাদের কাছ থেকে।
তারা কোন ব্যাংকের সাথে লেনদেন করছেন। টাকা তুলতে গেলে কি কি কাগজপত্র প্রমাণ হিসেবে দেখাতে হবে এগুলো জেনে নিন।
তাহলে বারবার টাকা তোলার জন্য দৌড়াতে হবে না।
যেহেতু বাংলাদেশে প্রচুর ফ্রিল্যান্সাররা কাজ করছেন এবং বিশাল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা দেশে নিয়ে আসছেন তাই ব্যাংকগুলোও এই ব্যাপারে একটা গাইডলাইন দিতে পারে।
তারা বলে দিতে পারে কি কি কাগজপত্র লাগবে তা সঙ্গে নিয়ে আসার জন্য।
ফ্রিল্যান্সিং আয়ের উপর আয়কর দিতে হবে কি?
এখন আপনি টাকা ব্যাংক থেকে তুলে নিজের কাছে নিয়ে এসেছেন বা ব্যাংকে জমা রয়ে গেছে।
এরপর প্রশ্ন আসে আপনাকে এই আয়ের উপর কোন আয়কর দিতে হবে কিনা?
বা আয়কর বিবরণীতে দেখাতে হবে কিনা?
বাংলাদেশে আইটি খাতকে প্রমোট করার জন্য সরকার বিভিন্ন ধরনের সুবিধা দিয়ে আসছেন আয়করের ক্ষেত্রে।
যারা ব্যবসা করে থাকেন আইটি ক্ষেত্রে তাদের আয়কে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আয়কর অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ ব্যবসা থেকে আয়কে আয়কর দিতে হবে না।
তবে কোন কোন খাত এই সুবিধা পাবে তার একটি লিস্ট রয়েছে সেখানে যার মধ্যে ২২টি খাতকে এই সুবিধা দেয়া হয়েছে। তবে তাদেরকে আয়কর বিবরণী জমা দিয়ে যেতে হবে।
আর যারা ব্যাক্তিগতভাবে নিজে কাজ করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে থাকেন তাদের সেই আয়কেও কর অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
যেহেতু ফ্রিল্যান্সার নিজেই একা কাজ করে থাকেন এবং বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে দেশে নিয়ে আসেন তাই তাকেও এই আয়ের উপর কোন আয়কর দিতে হবে না।
তবে এখানে অবশ্যই মনে রাখতে হবে ফ্রিল্যান্সিং থেকে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা দেশের প্রচলিত আইন মেনে বৈধ পথে দেশে নিয়ে আসতে হবে।
এখানে ব্যাংকিং চ্যানেলকেই আমরা বৈধ পথ বলে বুঝে থাকি।
তাই চেষ্টা করুন আপনার ফ্রিল্যান্সিং থেকে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা ব্যাংকের মাধ্যমে নিয়ে আসতে তাহলে আপনাকে আইনি ঝামেলায় পড়তে হবে না এবং সাথে আয়কর অব্যাহতিও পাবেন।
ফ্রিল্যান্সিং থেকে আয় কোথায় দেখাবেন?
আয়কর বিবরণীতে মোট দশটি খাত রয়েছে। এই খাতওয়ারী আপনাকে আয় দেখাতে হবে। কোন কোন খাতে মোট কতো টাকা বছরব্যাপি আয় করেছেন তা দেখাতে হয়।
একটি খাত আছে বৈদেশিক আয়। এই খাতে আপনি বিদেশ থেকে সারা বছর যতো বৈদেশিক মুদ্রা দেশে নিয়ে এসেছেন তা দেখাতে হবে।
আয়কর বিবরণী জমা দিতে হবে কি?
আপনি ফ্রিল্যান্সিং থেকে আয়ের উপর কর অব্যাহতি পেলেও আপনাকে এটা আয়কর বিবরণীতে দেখাতে হবে।
আপনাকে শুধু ফ্রিল্যান্সিং আয়ের বাইরে যে আয় থাকবে শুধুমাত্র সেই আয়ের উপর আয়কর দিতে হবে।
সেই আয়করও আপনি সঠিকভাবে ট্যাক্স প্ল্যানিং করে আপনার আয়কর বহুলাংশে হ্রাস করতে পারেন।
আপনি আয়কর বিবরণী আগে জমা দিয়ে না থাকলে অভিজ্ঞ কারো সাহায্য নিতে পারেন। আয়কর বিবরণী পূরণ করে সাথে দরকারি কাগজপত্র জমা দিয়ে রিটার্ন দাখিল করলেই আপনার কাজ শেষ হয়ে যাবে।
- লেখাটি blog.bdtax.com.bd -এ ২৪ জুলাই ২০১৭ প্রকাশিত হয়।