গুগলের জনপ্রিয় সেবা জিমেইল, ইউটিউব, গুগল ম্যাপস এই অ্যাপসগুলোর আপডেটেড ভার্সন হুয়াওয়ে মোবাইল সেটে আর থাকবে না। ইউএস হুয়াওয়েকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে। এর ফলে এখন থেকে যারা হুয়াওয়ের সাথে ব্যবসা করবে তাদেরকে আলাদা করে ইউএস প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। মূলত এরপরই গুগল এই সিদ্ধান্ত নেয়।
ট্রাম্প আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকেই চায়নার বিরুদ্ধে মেধাসত্ব চুরি, তার দেশে একচেটিয়া ব্যবসা করার অভিযোগ করে আসছিলেন। একের পর এক এই অভিযোগ করার পরে তিনি চায়নার ২০০ বিলিয়ন ডলারের উপর সর্বোচ্চ ২৫% হারে ট্যারিফ আরোপ করেন। কিন্তু তাতেও চায়নাকে পরাস্ত করতে না পারলেও আবার হুয়াওয়ের উপর এই নিষেধাজ্ঞা দেন। এবং তিনি বলেন, হুয়াওয়ে হতে পারে বাণিজ্য চুক্তির অংশীদার।
এই নিষেধাজ্ঞার পরে হুয়াওয়ের সাথে ব্যবসা চলিয়ে নিতে অনেক কোম্পানি বা দেশই পিছুটান দেওয়ার খবর বের হচ্ছে। কিন্তু সাথে সাথেই আবার ট্রাম্প প্রশাসন হুয়াওয়ের প্রতি সদয় হয়ে তিন মাস এই আদেশ শিথীল রাখে।
গুগলের পর চিপস নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এআরএম ঘোষণা করে তারাও হুয়াওয়ের সাথে আর কোন ব্যবসা করবে না। এই টেকনোলজির যুগে সবচেয়ে শক্তিশালী অস্র ধরা হয় ইনফরমেশনকে। অর্থাৎ যার কাছে যতো তথ্য আছে তিনিই হলেন সবচেয়ে শক্তিশালী। কয়েক মাস আগে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের তথ্য হাতিয়ে নেয়ার জন্য মার্ক জাকারবার্গ সমালোচনার শিকার হয়েছিলেন।
কিন্তু তথ্যের চেয়ে শক্তিশালি হলো চিপস। যেখানে তথ্য স্টোর করে রাখা হয়। একজনের কাছে অনেক তথ্য আছে। আপনি সেই তথ্য পেতে চান। কিন্তু সেই তথ্য আপনার কাছে নিয়ে আসার জন্য আপনার কাছে কোন ডিভাইস নাই। তাহলে সেই তথ্য যতো মূল্যবানই হোক না কেন তা আপনি কাজে লাগাতে পারবেন না। এবং তার মূল্য আপনার কাছে শূন্য। আর তাই চিপসকে ধরা হয় তথ্যের চেয়ে বেশি শক্তিশালী।
এখন বাস্তবতা হলো, পৃথিবীতে সবাই চিপস তৈরি করে না। গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠানই এই চিপস তৈরি করে। অর্থাৎ আপনি ব্যবসা করতে হলে সেখানে যেতেই হবে।
দ্বিতীয় বিষয় হলো, বর্তমানে স্মার্ট ফোনের যুগে চলছে অ্যান্ড্রয়েডের যুগ। ওপেন সোর্সের এই যুগে গুগল প্লে স্টোর না থাকলে আপনি কিছুই করতে পারবেন না।
আর গুগল প্লে স্টোর থেকে কোন অ্যাপস ডাউনলোড করতে চাইলে আপনাকে জিমেইল অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে। এখন আপনি কোন স্মার্ট ফোন কিনে যদি সেখান থেকে জিমেইলে লগইন করতে না পারেন তাহলে আপনি গুগল প্লে স্টোরে ঢুকতে পারবেন না। এবং আপনার পছন্দের অ্যাপসও ডাউনলোড করতে পারবেন না। তার মানে হলো আপনি সেই স্মার্ট ফোন দিয়ে কথা বলা ছাড়া আর কিছুই করতে পারবেন না।
তাহলে শুধুশুধু এতো টাকা দিয়ে স্মার্ট ফোন কিনে কি লাভ?
আমেরিকা কেন এটা করছে?
এর সহজ উত্তর, ব্যবসা।
চায়নাতে ব্যবসা করা অন্য দেশের জন্য অনেক প্রতিবন্ধক। যেমন, চায়নাতে ফেসবুক নেই, হোয়াটসঅ্যাপ নেই, ইউটিউব নেই। এগুলো না থাকার কারন হিসেবে চায়না বলছে, পশ্চিমারা এর মাধ্যমে তাদের দেশের তথ্য হাতিয়ে নিবে।
বিপরীতে চায়না আমেরিকাতে প্রচুর পরিমান ব্যবসা করছে। আমেরিকার সাথে চায়নার বাণিজ্য ঘাটতি অনেক। এ কারনে আমেরিকার অনেক ব্যবসা মার খাচ্ছে।
আরেকটি অভিযোগ হলো, চায়না আমেরিকার টেকনোলজি চুরি করছে। এটাই হলো এখন সবচেয়ে বড় অভিযোগ। চায়না আমেরিকার টেকনোলজি চুরি করে নিজেরা সেগুলো তৈরি করছে। যার ফলে তারা আর আমেরিকার উপর নির্ভরশীল থাকছে না বা ভবিষ্যতে থাকবে না।
এখন আমেরিকার ভয় হলো, চায়না সারা বিশ্বে যেভাবে ব্যবসা বাড়িয়ে চলেছে তাতে করে তারা চায়নার কাছে ব্যবসা হারাবে। ।
হুয়াওয়ের উপর অভিযোগ নতুন নয়। কিছুদিন ধরেই বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ চলে আসছে। আমেরিকার সাথে ইরানের পারমানবিক বিষয় নিয়ে সম্পর্কের টানাপোড়ন চলছে আগে থেকেই। ইরানের উপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা চলছে। হুয়াওয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্বেও হুয়াওয়ে ইরানের সাথে ব্যবসা করেছে। এই অভিযোগে হুয়াওয়ের সিএফও কে কানাডা থেকে গ্রেফতার করে। কিন্তু আমেরিকার এই অভি্যোগ হুয়াওয়ে অস্বীকার করেছে।
এখন এই যে আমেরিকা একের পর এক চায়নার উপর ট্যারিফ চাপাচ্ছে এবং শেষ পর্যন্ত হুয়াওয়ের উপর নতুন নিষেধাজ্ঞা এলো এতে করে হুয়াওয়ের যে ব্যবসার ক্ষতি হবে তা সব প্রযুক্তিবিদরাই বলছেন।
কিন্তু এতে করে কি শুধু চায়না বা তার দেশের পণ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হবে?
বিপরীতে আমেরিকার কোন ক্ষতি হবে না?
আমেরিকা-চায়না বাণিজ্যযুদ্ধ করছে কিন্তু এর মধ্যে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে কেন টার্গেট করা হয়েছে?
এমন বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর গত কয়েক দিন ধরে প্রযুক্তিবিদরা খুজছেন।
আসলে ট্রাম্প হুয়াওয়েকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চাচ্ছেন। তিনি চাচ্ছেন হুয়াওয়েকে দিয়ে চায়নাকে চাপে রেখে বাণিজ্য সুবিধা নিতে।
হুয়াওয়ে এখন কি করবে?
অপেক্ষা করা ছাড়া কিছু করার নেই।
তবে এতে করে কি শুধু হুয়াওয়েই বিপদে পড়বে?
এর সহজ উত্তর হলো, না।
একটা রিপোর্ট কিছু দিন আগে পত্রিকায় ছাপা হয়েছে যার শিরোনাম ছিলো, হুয়াওয়ে সবাইকে ডুবাবে। সত্যিই হুয়াওয়ে সবাইকে ডুবাবে।
হুয়াওয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেছেন, এতে করে হুয়াওয়ের কিছু যায় আসে না। এবং আমেরিকা তাদেরকে খাটো করে দেখছে। হুয়াওয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এতে করে আমেরিকারই ক্ষতি হবে বেশি। কারন, ৫জি প্রযুক্তি হুয়াওয়ে যে জায়গায় নিয়ে গেছে তার ধারেকাছেও এখন পর্যন্ত কেউ যেতে পারেনি। এবং তাদের কাছে যেতে অন্যদের বেশ সময় লাগবে।
হুয়াওয়ে আরো বলছে, তাদের উপর এমন আঘাত যে আসতে পারে তা তারা আগেই আচ করতে পেরেছিলো। এবং সেভাবেই তারা ব্যবস্থা নিচ্ছিলো।
হুয়াওয়ের উপর এই আঘাতের পর চায়নার জনগণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এর বিরুদ্ধে সমালোচনা করে এবং এর পাল্টা আঘাত হিসেবে আমেরিকার পণ্য বর্জনের ডাক দেয়। সবচেয়ে বেশি বিপদের মধ্যে পড়বে অ্যাপলের আইফোন। চায়নাতে তাদের এক-তৃতীয়াংশ সেট বিক্রি হয়। অতএব, আইফোন এর বিক্রি যদি চায়নাতে নিষীদ্ধ হয় তাহলে তাদের বিক্রিতে যে বড় ধরনের ধস নামবে তাতে সন্দেহ নেই। গোল্ডম্যান স্যাকস বলছে, আইফোন এর বৈশ্বিক মুনাফা ২৯% কমে যেতে পারে।
তবে হুয়াওয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেছেন, তিনি চান না চায়না এই ধরনের পদক্ষেপ নিক।
আমেরিকার বাইরে হুয়াওয়ের আফ্রিকা অঞ্চলে বেশ আধিপত্য রয়েছে। তারা সেখানে নিজেদের বিল্ট-ইন নেটওয়ার্ক স্থাপন করে সেবা দিচ্ছে। কমপক্ষে অর্ধেক আফ্রিকান চাইনিজ স্মার্টফোন ব্যবহার করে যার আবার নেটওয়ার্ক হুয়াওয়ের তৈরি করা। আফ্রিকার বেশিরভাগ জায়গায় ৪জি নেটওয়ার্ক চাইনিজদের করা। এবং আগামীতে যে ৫জি নেটওয়ার্কে উন্নিত হবে সেটাও তারাই করবে।
হুয়াওয়ে ১৯৯৮ সালে কেনিয়াতে প্রথম অপারেশন শুরু করে। এখন তারা আফ্রিকার ৪০টি দেশে ব্যবসা চালাচ্ছে। এর মধ্যে অর্ধেকেরই বেশি ৪জি নেটওয়ার্ক তাদের দ্বারা তৈরি করা।
সবচেয়ে বড় কথা আফ্রিকান সরকারগুলোর সাথে হুয়াওয়ের রয়েছে গভীর সম্পর্ক এবং এই সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে তারা গুগলের বাজার কঠিন করে দিতে পারে। আর তারা যেহেতু অনেক দিন ধরেই কাজ করছে তাই তাদের সেখানকার মানুষদের চাহিদা খুব ভালো করেই জানা।
আফ্রিকার ইউজারদের কাছে অপারেটিং সিস্টেম এর তুলনায় অল্প দাম, ডুয়াল সিম ফেসিলিটি এবং ব্যাটারির দীর্ঘ মেয়েদী সুবিধার বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ। এখন হুয়াওয়ে যদি গুগলের অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের জায়গায় তাদের নিজেদের অপারেটিং সিস্টেম চালু করতে পারে তাহলে সেখানকার পরিস্থিতি পাল্টে যেতে পারে।
আর এসব কারনেই হুয়াওয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হয়তো বলেছেন, আমেরিকার এই সিদ্ধান্তের ফলে তাদের কিছু আসে যায় না।
নতুন সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে কি?
গুগল তাদের সেবা হুয়াওয়ে মোবাইল সেটে বন্ধ করে দিয়ে চায়নাকে একটা সুবিধাই করে দিলো বলে মনে করছেন প্রযুক্তিবিদরা। তারা বলছেন, এতে করে চায়না নিজেদের আমেরিকা নির্ভর অ্যাপস এবং চিপস কমিয়ে আনবে। তারা নিজস্ব অ্যাপস এবং সার্চ ইঞ্জিন নিয়ে আসবে। এতে করে উল্টো আমেরিকারই ক্ষতি হবে।
একদিকে যেমন গুগলের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামবে চায়নার সার্চ ইঞ্জিন বাইদু, ঠিক অন্য দিকে উবারের বিরুদ্ধে নামবে ডিডি। যেখানে হুয়াওয়ের ভিত শক্ত সেখানে গুগল এবং উবার বিপদে পড়বে।
অন্যদের কি হবে?
আমেরিকা এবং চায়নার এই বাণিজ্য যুদ্ধ শুধু তাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবেনা। এটা নাড়া দিবে সবাইকে। তাই আমেরিকাকে অনুরুধ করা হচ্ছে এই যুদ্ধ থেকে সড়ে আসতে। আর এখন যে হুয়াওয়ে কে এই যুদ্ধে জড়িয়েছে চায়না থেকে সুবিধা আদায় করার জন্য তার নেতিবাচক প্রভাব আরো বড় আকার ধারন করবে।
কিছুদিন আগে আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়াং একটা রিপোর্ট প্রকাশ করে তাদের ওয়েবসাইটে। সেখানে তারা জানায়, বাণিজ্য যুদ্ধের কারনে মার্জ অ্যান্ড অ্যাকুইজিশন অনেক কমে গেছে। চায়না আগে যে হারে ইউএস কোম্পানি অধিগ্রহণ করতো তা এখন ইউএস সিকিউরিটি ইস্যু দেখিয়ে বন্ধ করে দিচ্ছে। যার ফলে দুই দেশের মধ্যে এখন আর কোম্পানি কেনা-বেচা হচ্ছে না।
আমেরিকার কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞার ফলে অনেক বড় বড় বাণিজ্য চুক্তি বাতিল হয়ে গেছে। ২০১৮ তে দেখা যায়, ইউএস কোম্পানি অধিগ্রহণ ২০১৬ সালের তুলনায় ৯৫% কমে গেছে। এক লাফে ৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে যা ২০১৬ সালে ছিলো ৫৫.৩ বিলিয়ন ডলার।
আমেরিকার মানি ট্রান্সফার কোম্পানি মানিগ্রাম অধিগ্রহণ করে নেয়ার কথা ছিলো চায়নার অ্যান্ট ফাইন্যান্সিয়াল যার প্যারেন্ট কোম্পানি আলিবাবা। ১.২ বিলিয়ন ডলারের এই অধিগ্রহন আটকে যায় সিকিউরিটি ইস্যুর অজুহাত দেখিয়ে। তারা চেয়েছিলো কন্সোর্টিয়ামের মাধ্যমে বহুজাতিক বানিয়োগকারীদের কাছ থেকে ১৪ বিলিয়ন ডলার ফান্ড রেইজ করতে।
জেপি মরগান জানায়, ২০১৮ সালে ১০ বিলয়ন ডলারের ১৬টি বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন করতে এক বছরের কিছু বেশি সময় লেগেছে। এবং এগুলো সবই ছিলো অনেক বড় আকারের ব্যবসায়িক লেনদেন।
একদিকে উচ্চ হারে ট্যারিফ এবং অন্যদিকে ইউএস প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা এই দুই মিলিয়ে ব্যবসার গতি ধীর হয়ে গেছে। এ জন্য চায়নার ব্যবসায়ীরাও এখন ধীর চলো নীতি অনুসরণ করছে।
২০১৯ সালের জানুয়ারী মাসে এক ট্রেড সার্ভে থেকে জানা যায়, ৭৮% ইউএস এর বিভিন্ন কোম্পানির এক্সিকিউটিভরা মনে করেন যদি বাণিজ্য যুদ্ধ চলতেই থাকে তাহলে দেশটি অর্থনৈতিক মন্দায় পরবে। এবং একই জরিপ থেকে জানা যায়, ৯৩% মনে করেন উচ্চ ট্যারিফ মার্জার অ্যান্ড অ্যাকুইজিশন বাধাগ্রস্থ হবে।
তাহলে এর বিকল্প কি?
ইউএস থেকে বাধাগ্রস্ত হওয়ার পর চায়না বিকল্প বাজার খুজতে থাকে। তারা এখন ইউরোপ এবং দক্ষিণপূর্ব এশিয়াতে ব্যবসা বাড়ানোর দিকে নজর দিচ্ছে। জুলাই ২০১৮ তে চাইনিজ প্রিমিয়ার লি কেকিয়াং ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন নেতাদের বেইজিং এ আমান্ত্রণ জানান এবং সেখানে মুক্ত বাণিজ্য নিয়ে কথা বলেন। উভয় পক্ষই বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার আদলে ব্যবসা করতে ঐক্যমত হয়। এর পরে চায়নার ব্যবসা ইউরোপে এক লাফে ৮১.৭% বৃদ্ধি পায়, ৩৩.২ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে হয় ৬০.৪ বিলিয়ন ডলার। যদিও সেখানে ইউকে, জার্মানি এবং ফ্রান্সের সাথে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।
কোন একটা সমস্যা তৈরি হলে তার বিকল্প খুজতে থাকেন সবাই। ব্যবসায়ীরা আরো দ্রুত এই কাজটা করে থাকেন। কারন এর সাথে জড়িয়ে থাকে অর্থ। অর্থ অলসভাবে পড়ে থাকা মানে মুনাফা কমে যাওয়া। লস হওয়া। কোম্পানির শেয়ার প্রাইস পড়ে যাওয়া। এমনকি কোম্পানি বন্ধও হয়ে যেতে পারে।
এসব কারনেই তারা দ্রুত বিকল্পের সন্ধানে থাকেন। এক জরিপ থেকে জানা যায়, ৫৭% টেক এবং ৫৩% গাড়ি ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য কোথা থেকে কিনবেন তা নিয়ে স্ট্রেটেজি ঠিক করার জন্য চিন্তা করছেন।
তারা ভাবছেন, চায়না মূল ভূখন্ডে মৌলিক কিছু বিষয় উৎপাদন করলেও তাইওয়ান বা সিংগাপুরে মেজরিটি অংশের কাজ সম্পন্ন করবেন। এতে করে পণ্যের কান্ট্রি অফ অরিজিন চায়নার পরিবর্তে অন্য দেশ হয়ে যাবে এবং ইউএস কাস্টমস থেকে তা পার পেয়ে যাবে এবং উচ্চ ট্যারিফ থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।
একটা দেশ আরেকটা দেশের পণ্য বা সেবার উপর প্রতিবন্ধকতা ঠেকাতে ব্যবহার করা হয় ট্যাক্স। বিভিন্নভাবে পণ্য বা সেবার উপর ট্যাক্স বসিয়ে এই কাজ করে থাকে সরকার।
উচ্চ ট্যাক্স থেকে বাচার জন্য ব্যবসায়ীরা কি করবে?
এক. যতদিন পর্যন্ত না চায়না-আমেরিকা কোন সমঝোতায় পৌছাতে পারছে ততোদিন চায়না থেকে যে পণ্য ইউএস ঢুকবে তার কান্ট্রি অফ অরিজিন পরিবর্তন করে দিতে চাইবে ব্যবসায়ীরা।
দুই. ট্যারিফ কোড পরিবর্তন করে ইউএস মার্কেটে ঢুকতে চাইবে।
তিন. অন্য কোন দেশে পণ্য মজুত করে রেখে দিয়ে সেখান থেকে সরবরাহ করতে চাইবে।
আগামীতে এসবই ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিতে চেষ্ঠা করবে।
কিন্তু এতো ম্যাকানিজমের পিছনে রয়েছে বাড়তি খরচ। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় শিফট করা খরচের বিষয়।
সমাধান কোথায়?
সমাধান সময়ই বলে দিবে।
গুগল এর পরে যে আপডেটেড আপারেটিং সিস্টেম নিয়ে আসবে তা ইতোমধ্যেই হুইয়াওয়ের সাথে শেয়ার করেছে। এখন তারা সেখান থেকে ধারনা নিয়ে যদি তাদের নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেম নিয়ে আসে তাহলে একটা সম্ভাবনা তৈরি হবে।
মোট কথা হলো কোন অপারেটিং সিস্টেমের অ্যাপসের সংখ্যা কতো বেশি তার উপরই একটা অপারেটিং সিস্টেমের সফলতা নির্ভর করে। যেমন, আইফোনের এবং অ্যান্ড্রয়েডের কথা যদি বলা হয় তাহলে আমরা সবাই জানি অ্যান্ড্রয়েডে অ্যাপসের সংখ্যা বেশি।
তাই নতুন করে হুয়াওয়ে তাদের নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেম নিয়ে এসে কেমন অ্যাপস নিজেদের স্টোরে ঢুকাতে পারবে তার উপরই নিভর্র করবে হুয়াওয়ের ভবিষ্যৎ। এসবের জন্য সময়ের দরকার। কিন্তু এই সময়টা হুয়াওয়ের জন্য সুখকর নয়।
- লেখাটি ০১ জুন ২০১৯ সাপ্তাহিক বিপরীত স্রোত পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।