Money

অস্কারঃ মিলিয়ন ডলার বিজনেস

January 10, 2018
Oscar Image

৮৯-তম অস্কার লাইভ অনুষ্ঠানের বিজ্ঞাপন বিরতিতে ৩০ সেকেন্ড বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য ২ মিলিয়ন ডলার দিতে হবে এবিসি টেলিভিশনকে।

আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি বসতে যাচ্ছে মুভি জগতের সবচেয়ে নামকরা আসর ৮৯-তম অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডস।

গত বছর এই রেট ছিলো ১.৭২ মিলিয়ন ডলার।

অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার হবে ডলবি থিয়েটার থেকে। উপস্থাপনা করবেন এবিসি টেলিভিশনের কমেডিয়ান জিমি কিমেল।

২০১৬ সালে অস্কার লাইভ অনুষ্ঠনে বিজ্ঞাপন প্রচার করে এবিসি টেলিভিশন আয় করেছিলো মোট ১১৫ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু এর আগের বছর আয় করেছিলো ১২৫ মিলিয়ন ডলার।

বিজ্ঞাপন বাজার দর গতবারের চেয়ে কেন এবার এতো বৃদ্ধি পেয়েছে?

তার মধ্যে একটি হলো, সাদা ছাড়া কালোরা গত দুই বছর ধরে অস্কার নমিনেশন পাননি। তাই বর্ণবাদী অভিযোগ শুনতে হয়েছে অস্কারের সাথে জড়িতদেরকে। কিন্তু এবার অস্কার সেই সমালোচনা হতে রক্ষা পেয়েছে।

এবার অস্কারে কালোরা মোট নয়টি নমিনেশন পেয়েছে। যার মধ্যে রয়েছেন ডেনজেল ওয়াশিংটন, স্লামডগ মিলিয়নিয়ার খ্যাত দেব প্যাটেল লায়ন মুভিতে সাপর্টিং অ্যাক্টর এর ভূমিকায় অভিনয়ের জন্য, ভায়োলা ড্যাভিস প্রমুখ।

এবারের অস্কারে বর্ণবাদ নিয়ে কোন কথা না থাকলেও রাজনৈতিক কারনে এবার অস্কার অনেকের নজর কাড়বে।

রাজনৈতিক সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দু হলেন আমেরিকার সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

তিনি নির্বাচনের আগে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা আস্তে আস্তে বাস্তবায়ন করতে শুরু করেছেন। প্রথমেই তিনি সাতটি দেশের নাগরিকদের আমেরিকাতে ঢুকতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। যদিও বিষয়টি আদালত পর্যন্ত পৌছেছে। কিন্তু তার এই ঘোষণার সময়েই অস্কার নমিনেশন আসে।

এবার অস্কারে ইরানের মুভি ‘দি স্যালসম্যান’ বেস্ট ফরেইন মুভি হিসেবে নমিনেশন পেয়েছে।

এই মুভিরই অভিনেত্রী ‘তারানাহ আলীদস্তি’ ইতোমধ্যে এক টুইট বার্তায় বলে দিয়েছেন, তিনি ২৬ ফেব্রুয়ারী লস এঞ্জেলেস-এ অস্কার এর যে আসর বসতে যাচ্ছে তাতে তিনি যোগ দিবেন না।

গ্র্যামি মিউজিক অ্যাওয়ার্ড এবং গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ড উভয় অনুষ্ঠানেই ট্রাম্পকে নিয়ে সমালোচনার ঝড় তুলেছেন অতিথিরা। যাদের মধ্যে ছিলেন মেরিল স্ট্রিপও।

এবার অস্কার অনুষ্ঠানেও যে সবার প্রধান সমালোচার টার্গেট হবেন ট্রাম্প তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।

যারা অনুষ্ঠান রেটিং নিয়ে কাজ করেন তারা বলেছেন, টেলিভিশন ব্যবসার জন্য ট্রাম্প একটি ভালো উপাদান।

সেলিব্রেটিরা কে কি বলেন তা শুনার জন্যই অনেক দর্শক টেলিভিশনের পর্দায় এবার চোখ রাখবেন। যার ফলে এবার গতবারের চেয়ে অনেক বেশি বিজ্ঞাপন রেট দিতে হচ্ছে বিজ্ঞাপনদাতা কম্পানিগুলোকে।

গতবার ৩৪.৪ মিলিয়ন দর্শক লাইভ অস্কার অনুষ্ঠান দেখিছিলেন যা গত আট বছরের মধ্যে ছিল সবচেয়ে কম।

এবার গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড দেখেছেন ২৬ মিলিয়ন টেলিভিশন দর্শক যাদের মধ্যে অর্ধেকই গত বছর এই অনুষ্ঠান দেখেননি।

এবং তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিলো ইয়াং দর্শক। আশা করা হচ্ছে অস্কারেও এবার দর্শক সংখ্যা অন্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি হবে।

অস্কার অ্যাকাডেমি তাদের শো টেলিকাস্ট করার রাইট টেলিভিশনগুলোর কাছে অনেক হাই রেটে বিক্রি করে থাকে। তাই টেলিভিশনগুলোও তাদের বিজ্ঞাপন রেট অনেক বাড়িয়ে দেয়।

এতো টাকা খরচ করে যে কম্পানিগুলো বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে তাদের মধ্যে কয়েকটি হলো আমেরিকান এক্সপ্রেস, ম্যাকডোনাল্ডস, জেনারেল মটরস, স্যামসাং ইত্যাদি।

টেলিভিশনে খেলা দেখার দর্শক হলো সবচেয়ে বেশি।

তারপরই আছে অস্কার অনুষ্ঠান।

যারা এই অনুষ্ঠান দেখেন তাদের অধিকাংশই হলেন ধনী শেণীর লোকজন যার মধ্যে বেশির ভাগই হলেন মহিলা দর্শক। তারা টেলিভিশনে চোখ রাখেন সেলিব্রেটিরা কে কি পড়েছেন, কিভাবে এসেছেন দেখার জন্য এবং সেগুলো নিজেরা কেনার জন্য।

টেলিভিশন, অস্কার অ্যাকাডেমি এবং বিজ্ঞাপনদাতারা এতো খরচ করেন মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ব্যবসা করার জন্য। কিন্তু যাদেরকে নিয়ে এই ব্যবসা তাদের আয় কতো? অস্কার পাওয়ার পর তাদের আয় কতো বৃদ্ধি পায়?

এক রিপোর্ট থেকে জানা যায়, কোন অভিনেতা যদি অস্কার অ্যাওয়ার্ড পান তাহলে তার পারিশ্রমিক ৮১ শতাংশ বেড়ে যায়।

কিন্তু এই বৃদ্ধির হার অভিনেত্রীদের ক্ষেত্রে তেমনটা প্রভাব ফেলে না বলে গত অস্কারে জেনিফার লরেন্স উল্লেখ করেন।

এক তথ্য থেকে জানা যায়, অস্কার অ্যাওয়ার্ড পাওয়ার পর একজন অভিনেতার ৩.৯ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত পারিশ্রমিক বৃদ্ধি পেতে পারে যেখানে একজন অভিনেত্রীর ক্ষেত্রে তা মাত্র আধা মিলিয়ন ডলার।

তবে এই পারিশ্রমিক অনেকটাই নির্ভর করে তারা অস্কার পাওয়ার আগে কেমন জনপ্রিয় ছিলেন।

আবার যারা কম বয়সে অস্কার পেয়েছেন তাদেরকেও অন্যদের তুলনায় বেশি লাভবান হতে দেখা গেছে।

যে মুভিতে অভিনয় করে অভিনয় শিল্পীরা বেশি করে আয় করছেন সেই মুভির আয়ও অস্কার নমিনেশন পাওয়ার পর অনেক বেড়ে যায়।

২০১৪ সালের তথ্য থেকে জানা যায়, সে বছর মোট নয়টি মুভি অস্কারে নমিনেশন পেয়েছিলো যাদের মোট আয় ছিলো ১৪৫.৭ মিলিয়ন ডলার।

আর ‘আমেরিকান হাসল’ বেস্ট মুভি হওয়ার পর অতিরিক্ত ৪২ মিলিয়ন ডলার আয় করেছিলো যা মুভিটির মোট আয়ের ৩০ শতাংশ।

২০০৮ থেকে ২০১২ সালের অস্কারে বেস্ট মুভিগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রতিটি মুভির গড় বাজেট ৫৬.৯ মিলিয়ন ডলারের বিপরীতে আয় ছিলো ১২৭.৭ মিলিয়ন ডলার।

তবে দেখা গেছে স্বল্প বাজেটের মুভিগুলোই সবচেয়ে বেশি আয় করেছে। সাদা-কালো নির্বাক মুভি ‘দি আর্টিস্ট’ মুভি সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে।

১৩.৫ ইঞ্চি লম্বা এবং ৮.৫ পাউন্ড ওজনের অস্কার ক্রেস্ট বানাতে খরচ পড়ে ৪০০ ডলার। এটা ২০১১ সালের সোনার দাম বিবেচনা করে। তখন সোনার দাম তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি ছিলো।

কিন্তু এই ক্রেস্ট যখন কেউ বিক্রি করেন তখন তার মূল্য হয়ে যায় অনেক বেশি বিশেষত এর সাথে ইতিহাস জড়িয়ে থাকার কারনে।

‘গন উথ দি উইন্ড’ মুভির জন্য ডেবিড ও. সেজনিক বেস্ট পিকচার অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলেন যেটা ১৯৯৯ সালে ১৫,৪২,৫০০ ডলারের কিনে নিয়েছিলেন মাইকেল জ্যাকসন।

প্রথম অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড ১৯২৯ সাল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩,০০০ হাজার ক্রেস্ট প্রদান করা হয়েছে।

১৯৮২ সাল থেকে আর. এস. ওনস অ্যান্ড কম্পানি অস্কার ক্রেস্ট বানিয়ে আসছে।

সোনার দাম এবং তাদের বানানোর পারিশ্রমিক মিলিয়ে অংকটা যে বেশ বড় আকারের হবে তা বুঝা যাচ্ছে।

অস্কার উইনারদের নাম যে সুন্দর খামের ভিতরে মোড়ানো থাকে তা বানাতে খরচ পরে ২০০ ডলার।

২৪ ক্যাটেগরির জন্য চার সেট করে চার আউন্স ওজনের খামটি হাত দিয়ে বানাতে ১১০ ঘন্টা সময় লাগে।

কোন পার্টিই আসলে খাবার ছাড়া শেষ হয়না।

সেলিব্রেটি শেফ উলফগ্যাং পাক দুই দশক ধরে একাধারে ১,৫০০ লোককে খাওয়ানোর এই অসাধ্য কাজটি করে চলেছেন।

গত বছর খাওয়ার ম্যানুতে ছিলো অস্কার-শেপ স্যামন এবং ক্যাভিয়ার, মিনি কোবে বিফ বার্গার এবং মিনি চিকেন পট পাইস।

যাদের জন্য এই আসর তাদেরকে নির্বাচন করার জন্য প্রায় ছয় হাজার অ্যাকাডেমি মেম্বার ভোট দিয়ে থাকেন। তাদের ভোট গণনা করেই চূড়ান্তভাবে একজন বিজয়ীকে বেছে নেয়া হয়।

২৪টি ক্যাটেগরিতে ছয় হাজার করে ভোট এক বিশাল ব্যাপার।

সেই অসাধ্য কাজটি করে থাকেন বিগ ফোর অ্যাকাউন্টিং ফার্ম পিডব্লিউসি।

পিডাব্লিউসি-র মাত্র দুইজন সৌভাগ্যবান প্রতিনিধি অস্কার বিগ নাইটের আগে জানতে পারেন কারা সেই সৌভাগ্যবান যাদের হাতে উঠতে যাচ্ছে মুভি জগতের সবচেয়ে প্রেস্টিজিয়াস প্রাইজ।

বিগ ফোর ফার্ম এর মেম্বার হিসেবে এই কাজটি করে তারা যে বেশ বড় অংকের ফি নিয়ে থাকে তা নিশ্চিতভাবে বলা যায়।

শুধু তাইনা, অস্কার অনুষ্ঠান সফল করতে সেট নির্মাণসহ অন্যান্য প্রডাকশন প্ল্যানিং, চা-কফি পরিবেশনা, পরিবহন, ফুল ইত্যাদি সবই রাখতে হয়। এর জন্যও খরচ করতে হয় প্রচুর টাকা।

মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ব্যবসা হয়। আসলে সবকিছুর পিছনেই রয়েছে ব্যবসা।

বাংলাদেশে যে জাতীয় পুরষ্কার দেয়া হয় তার পেছনে কতো খরচ হয়?

যেই মুভি পুরষ্কার পায় তার আয় কতো বৃদ্ধি পায়? যারা অভিনয় করেন তাদের আয় কতো বৃদ্ধি পায়?

টেলিভিশনগুলো কতো রেট নেয় বিজ্ঞাপন প্রচার করার জন্য?

প্রশ্নগুলোর উত্তর অজানা।

You Might Also Like

error: Content is protected !!