Tax

ট্যাক্স প্ল্যানিংঃ কোটিপতি হওয়ার উপায়

January 9, 2018
Tax Planning Image

সিএনএন ২২ মার্চ ২০১৬-তে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে যাতে বলা হয়েছে, আমেরিকার প্রতি চারজনের মধ্যে একজনের কোন অবসরকালীন সেভিংস নেই।

আর যারা সেভিংস করেন তাদের মধ্যে ২৬% বলেছেন তাদের কাছে এক হাজার ডলারের কম রয়েছে। আর ১৬% বলেছেন তাদের কাছে এক হাজার থেকে দশ হাজার ডলারের মধ্যে আছে।

সিএনএন আরেকটি রিপোর্ট প্রকাশ করে ২৭ আগস্ট ২০১৬-তে যাতে বলা হয়েছে, কিভাবে আপনি অবসরের পর মিলিয়নিয়ার হবেন।

এখানে বলা হয়েছে, জীবনে সফল হওয়ার জন্য আপনি যেমন লক্ষ্য ঠিক করেন তেমনি আপনি যদি ঠিক করেন আপনি মিলিয়নিয়ার হবেন তাহলে তা কঠিন কিছুই হবে না।

আপনার অবসরের পর আপনার মাসিক খরচ কতো লাগবে তা এখন হয়তো বলা সম্ভব না বা আপনি কতোদিন বাচবেন তাও বলা সম্ভব না।

কিন্তু কিছু সাধারন নিয়ম আছে যা মেনে চললে এক্ষেত্রে সফল হওয়া যাবে।

প্রথমে অংকটার দিকে তাকালে অসম্ভব মনে হতে পারে।

কিন্তু আপনার সাহসের জায়গাটা হলো আপনার সামনে দীর্ঘ সময় পড়ে আছে। এবং প্রতি বছর শেষে চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ যোগ হবে।

এই সবই আপনাকে নিয়ে যাবে অবসরের পর একজন মিলিয়নিয়ার হওয়ার দিকে।

তারা ধরে নিয়েছে একজন মানুষ ৬৫ বছর পরে চাকরি থেকে অবসরে যাবেন। এবং বাৎসরিক ১০% সুদ যোগ হবে যা চক্রবৃদ্ধি হারে প্রতি বছর যোগ হবে।

সিএনএন মানি বয়সকে চারটি ধাপে ভাগ করে কোন ধাপে কতো করে জমাতে হবে তার একটি হিসেব দেখিয়েছে।

চলুন নিচে জেনে নেই মিলিয়নিয়ার হতে চাইলে কোন বয়সে আমেরিকানদের কতো করে জমাতে হবে।

২৫ বছর বয়সে
টাকা জমানোর ক্ষেত্রে বয়স সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর। যত আগে এই কাজটা শুরু করা যাবে ততোটা ভালো অবস্থানে থাকা যাবে।

২৫ বছরটা হলো সবচেয়ে ভালো একটা সময়। এই সময় থেকেই যদি শুরু করা যায় তাহলে মাসে খুবই অল্প জমিয়ে সেই লক্ষ্য অর্জন করা খুবই সহজ হবে।

মাত্র ১৭৫ ডলার (১৪,০০০ টাকা) করে জমালে ৬৫ বছর বয়সে যখন কেউ অবসর নিবেন তখন তিনি হয়ে যাবেন একজন মিলিয়নিয়ার।

প্রতি মাসে ১৭৫ ডলার করে জমালে আগামী ৪০ বছরে দিতে হবে মাত্র ৮৪ হাজার ডলার। আর বাকি ৯১৬,০০০ ডলার আসবে জমানো অর্থের রিটার্ন থেকে।

তবে কেউ যদি মাসে এই পরিমান ডলারও জমাতে না পারেন তাহলে যে পরিমানই পারেন তা যতো ছোট অংকই হোক তা দিয়েই শুরু করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

এখন হয়তো আয় কম তাই কম জমছে। কিন্তু সামনে যখন আয় বাড়বে তখন জমানোর পরিমান বাড়িয়ে দিলেই হবে। আর এতো দিন ধরে যা জমেছে তা একটু বেশি সুবিধা দিবে।

৩৫ বছর বয়সে
যাদের বয়স এখন ৩৫ এবং এখনও কোন সেভিংস নেই তাদের মাসিক জমানোর পরিমান দুই ঘুণের থেকেও বেশি হবে ২৫ বছর বয়সীদের তুলনায়।

২৫ বছর বয়স যাদের তারা যেমন মাত্র ১৭৫ ডলার জমালেই মিলিয়নিয়ার হতে পারতেন এক্ষেত্রে ৩৫ বছর বয়সীদের মাসে জমাতে হবে ৪৭০ ডলার করে।

মাসে এই পরিমান ডলার জমালে আগামী ৩০ বছরে জমা হবে ১৬৯,০০০ ডলার। আর মিলিয়নিয়ার হতে বাকিটা আসবে তার জমানো অর্থের রিটার্ন থেকে।

তবে যারা কিছু হলেও জমিয়েছেন তারা কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবেন। তাদের মাসে জমানোর পরিমান অন্যদের তুলনায় কম হবে।

৪৫ বছর বয়সে
বয়স বাড়ার সাথে সাথে মাসিক সেভিংস এর পরিমান বেড়ে যাবে যদি না কেউ আগে একদমই কোন সেভিংস না করে থাকেন।

এই বয়সে কেউ যদি মিলিয়নিয়ার হতে চায় তাহলে তাকে জমাতে হবে মাসে ১,৩৩০ ডলার করে। তাহলে আগামি ২০ বছরে তার জমবে ৩১৯,০০০ ডলার। বাকি ডলার আসবে রিটার্ন থেকে।

৫৫ বছর বয়সে
যাদের বয়স ৫৫ কিন্তু কোন সেভিংস নেই তাদের জমানোর পরিমান স্বাভাবিকভাবেই অন্যদের তুলনায় খুবই বেশি হবে।

মাসে ৪,৮০০ ডলার করে আগামী ১০ বছর জমালে তিনি ৬৫ বছর বয়সে মিলিয়নিয়ার হবেন। তাকে ১০ বছরে দিতে হবে ৫৭৬,০০০ ডলার। এবং বাকিটা আসবে তাঁর রিটার্ন থেকে।

উপরে যে হিসেব দেয়া হয়েছে তা আমেরিকার মানুষদের জন্য।

এক মিলিয়ন ইউএস ডলার বাংলাদেশী টাকায় আট কোটি টাকা (ডলার প্রতি আশি টাকা ধরে)। আমরা আট কোটি টাকার জায়গায় এক কোটি টাকা জমানোর চিন্তা করতে পারি।

তবে কেউ যদি এর বেশি জমাতে পারেন তাহলে তার জন্য আরো ভালো।

বাংলাদেশে কেউ যদি এক কোটি টাকা ৬৫ বছর বয়সে পেতে চান তাহলে মাসে কতো করে জমাতে হবে তা জানার জন্য আপনি বিভিন্ন ব্যাংক বা জীবন বীমা কোম্পানির কাছে যেতে পারেন।

বিশেষঙ্গরা বলছেন, প্রতিটা মানুষের তাদের মাসিক বা বাৎসরিক আয়ের ১০% সঞ্চয় করা উচিত। একটা জরিপে দেখা গেছে ২৭% মানুষ তাদের আয়ের ১০% এর কম সঞ্চয় করেন।

কেন তারা সঞ্চয় করতে পারছেন না?

এর উত্তরে তারা বলেন, দৈনন্দিন খরচ, বাচ্চাদের পড়ালেখার খরচ, ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে গিয়ে তারা আর সঞ্চয় করতে পারছেন না।

তবে এই অবস্থার পরিবর্তন হতে শুরু করেছে। ২০০৯ সালের পর আমেরিকাতে সঞ্চয়ের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

জীবনের শুরুতেই যখন ইনকাম শুরু হবে তখন থেকেই সঞ্চয় শুরু করে দেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। এখন সেটা যে পরিমানই হোক। প্রথমে তা খুবই নগণ্য মনে হলেও শেষ জীবনে তা বেড়ে অনেক বড় অংকে পরিনত হবে।

এখন প্রশ্ন উঠতে পারে ট্যাক্স প্ল্যানিং এর সাথে কোটিপতি হওয়ার সম্পর্ক কি?

বাংলাদেশে এই বছর থেকে ৩০ নভেম্বর আয়কর দিবস পালিত হচ্ছে। এর আগে ১ নভেম্বর থেকে ৭ নভেম্বর, এই সাত দিন আয়কর মেলা পালন করা হয়েছে।

তবে যদি কেউ বেধে দেয়া সময়ের মধ্যে আয়কর বিবরণী জমা দিতে না পারেন তাহলে বিলম্ব সময়ের জন্য সুদ দিয়ে জমা দিতে হয়।

খবরে প্রকাশিত হয়েছে, করদাতারা ব্যাপক উৎসাহ নিয়ে মেলায় আয়কর দিয়েছেন। হয়রানি অনেক কম হয়েছে। তবে কেউ কেউ লম্বা লাইনে দাড়িয়ে থেকে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন।

আবার কেউ কেউ বলেছেন, দেশের উন্নয়নের জন্য আয়কর দিচ্ছি। একটু কষ্ট হলেও তাতে তাদের খারাপ লাগছে না।

সাত দিনে মোট ২,১২৯.৬৭ কোটি টাকা আয়কর আদায় হয়েছে। গত বছরের চেয়ে ৪.৬৩% বেশি।

আর রিটার্ন জমা দিয়েছেন ১.৯৪ লাখ করদাতা। গতবারের তুলনায় ২১% বেশি।

নতুন ই-টিআইএন নিয়েছেন ৩৬,৮৫৩ জন যা গতবারের চেয়ে ১৪২% বেশি।

কেউ যাতে কোন অবস্থাতেই কর ফাকি দিতে না পারে সেজন্য কঠোর ব্যবস্থা নিতে এনবিআর চেয়ারম্যানকে আহ্বান জানান অর্থমন্ত্রনালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক।

কেন কর ফাকি দেয়ার কথা উঠে বা আমরা প্রায়ই কেন এই ধরনের কথা শুনে থাকি?

সবাই যে ফাকি দেওয়ার চিন্তা করেন তা নাও হতে পারে।

অনেকেরই ধারনা, আয়কর হিসেব করা খুবই জটিল। আয়কর ফর্ম পূরণ করাও জটিল। অনেক তথ্য দিতে হয়। তাই অনেকেই ভয় পেয়ে যান। কোন তথ্য দিলে আবার কি হয়ে যায়।

এক্ষেত্রে নতুন করদাতারা যারা আগে কর দিয়েছেন তাদের পরামর্শ নিতে পারেন কিভাবে আয়কর ফর্ম পূরণ করবেন বা যারা এই বিষয়ে জানেন তাদের কাছে যেতে পারেন।

আর শেষ কথা হলো, অনেক টাকা আয়কর দিতে হয়। অনেকেই জানেন না বছরে যা কর আসে তার উপর একটি নির্দিষ্ট হারে কর রেয়াত পাওয়া যায়। সে ক্ষেত্রে তার প্রকৃত আয়কর অনেকাংশে কমে যায়।

যেমন করযোগ্য আয়ের সর্বোচ্চ ২৫% বিনিয়োগ হিসেবে দেখানো যায় যার উপর যথাক্রমে ১৫%, ১২% এবং ১০% হারে আয়কর রেয়াত পাওয়া যায়। এতে করে একজন আয়কারদাতার যে আয়কর আসে তা অনেকাংশে কমে যায়।

বিনিয়োগের দুইটা সুবিধা আছে।

একটা হলো, বিনিয়োগের ফলে প্রকৃত আয়করের পরিমান কমে। আর অন্যদিকে নিজের সেভিংস এর পরিমান বাড়ে যা ভবিষ্যতে অনেক উপকারে আসে।

আরেকটা বড় সুবিধা হলো, আয়কর দিয়ে দেশের উন্নয়নের অংশীদার হওয়া।

যে ক্ষেত্রে সেভিংস করলে আপনার টাকাও জমবে এবং আয়কর রেয়াত পাবেন তার মধ্যে একটি হলো ডিপিএস। বর্তমানে আপনি বছরে সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা বা মাসে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ডিপিএস-এ জমালে তার উপর কর রেয়াত পাবেন।

সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাওয়া যায় জীবন বীমা প্রিমিয়াম এর ক্ষেত্রে। আপনি বছরে যতোই প্রিমিয়াম দেন না কেন সম্পূর্ণ প্রিমিয়ামের উপরই আপনি কর রেয়াত পাবেন।

আপনি তাই খুজ নিতে পারেন বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংকে গিয়ে তাদের সেভিংস সুবিধাগুলো সম্পর্কে।

এবং বীমা কোম্পানির কাছে বা এজেন্টের কাছ থেকে তাদের বিভিন্ন মেয়াদের জীবন বীমা পলিসি সম্পর্কে। যেখানে বেশি রিটার্ন পাবেন, আপনার প্ল্যানের সাথে মিলে যাবে সেখানে আপনি সেভিংস শুরু করতে পারেন।

কিছু সতর্কতা
অবসরকালীন সেভিংসের কোন ম্যাজিক ফর্মূলা নেই।

আপনি এখন জীবনের যে ধাপেই থাকুন না কেন, আপনার বয়স এখন যাই থাকুক না কেন, ৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত যেতে আপনার জীবনে যে কোন অনাকাঙ্ক্ষিত বিপদ আসবে না তা নিশ্চিতভাবে কেউ বলতে পারবে না।

পরিবারের যে কেউ অসুস্থ হয়ে যেতে পারে বা অন্য যে কোন ইমার্জেন্সি হতে পারে, যে জন্য আপনার টাকা খরচ হতে পারে, যা আপনার হিসেবে থাকে না।

আপনি এখন বিনিয়োগের উপর যে রিটার্ন আশা করছেন তা যে কোন সময় কমতে পারে। মুদ্রাস্ফীতি, অর্থনৈতিক মন্দা, অজানা অর্থনৈতিক দূর্যোগ আসতে পারে।

এইসব কারনে আপনার রিটার্ন বিঘ্নিত হতে পারে। আর তাই বিশেষজ্ঞরা প্রতি বছর আগের বছরের চেয়ে ৩% বেশি করে সেভিংস এর পরিমান বাড়িয়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

আর সঠিক প্ল্যান থাকলে কোন কিছুই অসম্ভব নয়।

আপনি যদি জীবনকে সঠিকভাবে পরিচালিত করেন এবং আপনার লক্ষ্যে অবিচল থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনি আপনার লক্ষ্যে পৌছে যাবেন।

You Might Also Like

error: Content is protected !!