Tax

কিভাবে ব্যক্তি করদাতা আয়কর রিটার্ন ফর্ম পূরণ করবেন

January 13, 2018
Tax Return Fill-up Image

১ থেকে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে আয়কর মেলা। এই সময়ে করদাতাদের মেলায় উপচে পড়া ভিড় থাকে। আপনি যদি করদাতা হয়ে থাকেন তাহলে আপনাকে ট্যাক্স রিটার্ন ফর্ম বা আয়কর বিবরণী পূরণ করতে হবে।

২০১৬-১৭ কর বছর থেকে নতুন রিটার্ন ফর্ম আইটি-১১গ২০১৬ চালু করা হয়েছে। চলতি কর বছরে এই নতুন রিটার্ন ফর্ম’য়ের পাশাপাশি আগের রিটার্ন ফর্ম আইট-১১গ ব্যবহার করা যাবে।

একজন ব্যাক্তি করদাতা কিভাবে কর গণনা করে রিটার্ন তৈরি করবেন তার উপর আমাদের অনলাইন ট্যাক্স কোর্স রয়েছে। খুবই অল্প খরচে সেরা ভিডিও টিউটরিয়ালের সাথে পাচ্ছেন, কর গণানা এবং রিটার্ন ফরমের এক্সেল সফট কপি।

আপনি এখনই কোর্স ফি পরিশোধ করে আপনার পছন্দের ট্যাক্স কোর্স শুরু করতে পারবেন। কোন নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। এবং আপনি যেদিন কোর্স কিনবেন সেদিন থেকে টানা ১৫ দিন যতোবার খুশি ততোবার দেখার সুযোগ পাবেন!

নতুন বা পুরাতন যে ফর্মই পূরণ করুন না কেনো আপনাকে মূল আয়কর বিবরণীর সঙ্গে প্রয়োজন মতো কয়েকটি তফসিল এবং বিবরণী সংযুক্ত করতে হবে।

এর সবকটিই আপনার জন্য প্রযোজ্য নয়। মূল আয়কর বিবরণীর সঙ্গে আপনার জন্য কোনটি প্রযোজ্য এবং তার মধ্যে কী কী তথ্য দিতে হবে তা নিচে থেকে জেনে নিতে পারেন।

তিন পৃষ্টার মূল রিটার্ন ফর্ম

মূল রিটার্নটি তিনটি অংশে বিভক্ত।

অংশ-১ করদাতার সাধারণ তথ্য। এই অংশে ফর্মটির ঠিক উপরে ডান পাশে করদাতার ছবি লাগানোর ঘর রয়েছে। যারা এবার প্রথম কর দিতে যাচ্ছেন কেবল তাদের জন্যই ছবি লাগানো বাধ্যতামূলক। ছবিটি প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা অথবা ওয়ার্ড কমিশনার অথবা যে কোনো টিআইএনধারী করদাতা কতৃক সত্যায়িত হতে হবে।

প্রতি পাঁচ বছর পর পর একজন ব্যক্তি-করদাতাকে তার সত্যায়িত ছবি রিটার্নের সঙ্গে দিতে হয়।

সাধারণ তথ্য অংশে ০১ হতে ২৩ ক্রমিক পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে করবছর, করদাতার নাম, লিঙ্গ, টিআইএন, সার্কেল, কর অঞ্চল, আবাসিক মর্যাদা, জন্ম তারিখ, আয় বছরসহ অন্যান্য ব্যক্তিগত তথ্যাদি প্রদান করতে হয়।

অংশ-২ আয় ও আয়করের বিবরণী, এই অংশে ২৪ হতে ৪৮ ক্রমিক পর্যন্ত করদাতার আয় ও করের তথ্য উল্লেখ করতে হয়। এতে আপনার কোন কোন খাত থেকে কত করযোগ্য আয় হয়েছে তা উল্লেখ করতে হয়। এবং এরপর আপনার মোট করদায়, কর রেয়াত, উৎসে কর উল্লেখ করে আপনার চূড়ান্ত করদায় উল্লেখ করতে হয়।

অংশ-৩ নির্দেশাবলি, সংযুক্তিসমূহ এবং প্রতিপাদন, মূল রিটার্নটির এই অংশে করদাতাকে প্রতিপাদন ও স্বাক্ষর প্রদান করতে হয়। এই অংশে কোন ব্যক্তি-করদাতা প্রতিবন্ধী সন্তানের জন্য অতিরিক্ত করমুক্ত সীমার সুবিধা গ্রহণ করলে, তার স্ত্রী/স্বামী অনুরূপ সুবিধা গ্রহণ করেছেন কিনা তা উল্লেখ করতে হয়। এবং পরিসম্পদ, দায় ও ব্যয় বিবরণী, জীবনযাপন সংশ্লিষ্ট ব্যয়ের বিবরণী, উৎসে কর পরিশোধের স্বপক্ষে যে সকল প্রমাণাদি দাখিল করা হচ্ছে তার তালিকা প্রদান করতে হয়।

এইসব তথ্য দেওয়া শেষ হলে সবার নিচে প্রতিপাদন দিতে হয়, “আমি সশ্রদ্ধচিত্তে ঘোষণা করিতেছি যে, এই রিটার্ন এবং উহার সহিত সংযুক্ত বা সংযোজিত বিবরণীতে প্রদত্ত তথ্য এবং প্রমাণাদি আমার জ্ঞান ও বিশ্বাসমতে সঠিক ও সম্পূর্ণ”।

তাই আপনি যখন রিটার্ন ফর্মে কোনো তথ্য দিচ্ছেন তখন সতর্ক থাকুন কোনো ভুল তথ্য দিচ্ছেন কিনা। যাতে কোনো ঝামেলায় পড়তে না হয়।

এর নিচেই করদাতার পূর্ণ নাম, তারিখ, স্থান উল্লেখ করে স্বাক্ষর প্রদান করতে হয়। এর মাধ্যমেই মূল রিটার্ন ফর্মটি পূরণ শেষ হবে। এবং এর সাথে প্রয়োজন মতো নিচের তফসিল এবং বিবরণী সংযুক্ত করতে হবে।

তফসিল-২৪এ: বেতন আয়ের বিবরণ

যদি কোনো করদাতা চাকরিজীবী হয়ে থাকেন কেবল তখনই এই তফসিল পূরণ করতে হবে। তা না হলে এটা সংযুক্ত করার দরকার নেই।

এই তফসিলে মূল বেতন, বাড়িভাড়া ভাতা, চিকিৎসা ভাতা, যাতায়াত ভাতা, উৎসব ভাতা, অন্যান্য সুবিধাসমূহ উল্লেখ করে বেতনখাতে মোট কতো টাকা আয় হয়েছে তা উল্লেখ করতে হয়।

তফসিল-২৪বি: গৃহ-সম্পত্তি আয়ের বিবরণ

যদি কোনো করদাতার গৃহ-সম্পত্তি খাতে আয় থাকে তাহলে এই তফসিল পূরণ করতে হবে। মোট বাড়িভাড়া থেকে কতো টাকা আয় হয়েছে তা থেকে খরচসমূহ বাদ দিয়ে মোট করযোগ্য আয় বের করতে হয়।

তফসিলে তিনটি গৃ-সম্পত্তির আয় দেওয়ার জায়গা রয়েছে। কোন করদাতার যদি এর চেয়ে বেশি গৃহ-সম্পত্তি থেকে বাড়িভাড়া আয় থাকে তাহলে অতিরিক্ত কাগজ ব্যবহার করে আয় উল্লেখ করতে পারবেন।

তফসিল-২৪সি: ব্যবসা বা পেশার আয়ের বিবরণ

এই তফসিলে মোট আয় অংশে বিক্রয়/প্রাপ্তি, মোট মুনাফা, ব্যয় এবং নিট মুনাফা উল্লেখ করতে হয়। আর আরেক অংশে স্থিতিপত্র যেটা ব্যালেন্স শিট হিসেবে পরিচিত তাতে মোট সম্পদ, মূলধন এবং দায়সমূহ উল্লেখ করতে হয়।

এই তফসিলটিও শুধুমাত্র যাদের ব্যবসা বা পেশার আয় রয়েছে তাদের জন্য, যাদের এই খাতে আয় নেই তাদেরকে এটা দাখিল করতে হবে না।

তফসিল-২৪ডি: কর রেয়াতের বিবরণ

করযোগ্য আয়ের উপর করদায় দেখলে অনেকেই ভয় পেয়ে যান। কিন্তু এই করদায় নির্দিষ্ট কিছু খাতে বিনিয়োগ এবং দান করলে তার উপর কর রেয়াত পাওয়া যায় যা অনেকাংশে করের বুঝা লাগব করতে সাহায্য করে।

এই তফসিলে মূলত আপনি যে যে খাতে বিনিয়োগ এবং দান করেছেন তা উল্লেখ করতে হয়। যদি আপনার কোনো আয় বছরে বিনিয়োগ বা দান না থাকে তাহলেও এই তফসিল দাখিল করতে হবে না।

আইটি-১০বি: পরিসম্পদ, দায় ও ব্যয় বিবরণী

এই বিবরণী দাখিল করা সবার জন্য বাধ্যতামূলক নয়। কেবল নিচের তিনটি শর্তের যে কোনো একটি পূরণ হলেই আপনাকে এই বিবরণী দাখিল করতে হবে।

ক) আয় বছরের শেষ তারিখে মোট পরিসম্পদ এর পরিমাণ ২৫ লাখ টাকার অধিক হলে; অথবা

খ) আয় বছরের শেষ তারিখে মোটর গাড়ি (জিপ বা মাইক্রোবাসসহ) এর মালিকানা থাকলে; অথবা

গ) আয় বছরে কোনো সিটি কর্পোরেশন এলাকায় কোনো গৃহ-সম্পত্তি বা অ্যাপার্টমেন্টের মালিক হলে অথবা গৃহ-সম্পত্তি বা অ্যাপার্টমেন্টের বিনিয়োগ করলে।

উপরের তিনটি শর্তের যে কোনো একটি শর্ত পূরণ না হলেও আপনি চাইলে স্বপ্রণোদিতভাবে এই বিবরণী দাখিল করতে পারেন।

আইটি-১০বিবি: জীবনযাপন সংশ্লিষ্ট ব্যয়ের বিবরণী

এই বিবরণীতে সারা বছর ধরে আপনার পরিবারসহ থাকা, খাওয়া, যাতায়াত, ছেলে-মেয়ের পড়ালেখার খরচ ইত্যাদি যাবতীয় খরচ উল্লেখ করতে হয়। এর নিচে উৎসে কর ও পরিশোধিত কর উল্লেখ করে মোট ব্যয় উল্লেখ করতে হয়।

এর নিচে প্রতিপাদন দিয়ে নাম, তারিখ উল্লেখ করে স্বাক্ষর করলেই এই বিবরণী শেষ হয়। এর মাধ্যমেই আপনার আয়কর বিবরণীর সঙ্গে যাবতীয় সংযুক্তি পূরণ করা শেষ হবে।

এই কর বছর থেকে শুধুমাত্র বেতনভোগী করদাতাদের রিটার্ন ফর্ম আরও সহজ করার লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নতুন একটি রিটার্ন ফর্ম ‘আইটি-১১ঙ’ বের করেছে। এই ফর্ম খুবই ছোট এবং উপরে এতক্ষণ ধরে যে রিটার্ন ফর্মটি নিয়ে আলোচনা করলাম তা থেকে অনেক সহজ। এতে অনেক কম তথ্যের প্রয়োজন হয়।

তাই যাদের শুধু বেতনখাতে আয় আছে তারা চাইলে আইটি-১১ঙ ফর্মটি ব্যবহার করতে পারেন। এতে সময় এবং ঝামেলা অনেকাংশে লাঘব হবে।

অন্যদিকে যে সকল ব্যক্তি-করদাতার ব্যবসা বা পেশাখাতে আয় রয়েছে ও এরকম আয়ের পরিমাণ ৩ লাখ টাকার বেশি নয় সেসব করদাতার জন্যও আলাদা আরেকটি আয়কর বিবরণী ‘আইটি-১১চ’ রয়েছে। তারা চাইলেও আইটি-১১চ আয়কর বিবরণী ব্যবহার করতে পারেন।

লেখাটি bdnews24.com-এ ০২ নভেম্বর ২০১৭-তে প্রকাশিত হয়েছে।

You Might Also Like

error: Content is protected !!