ব্যক্তি করদাতার কর দায় হ্রাস করার বৈধ উপায় হলো বিনিয়োগের উপর কর রেয়াত সুবিধা। কর রেয়াত একজন ব্যক্তি করদাতার করের পরিমান বহুলাংশে হ্রাস করে থাকে। তাই কর রেয়াত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এই কর রেয়াত সুবিধা পেতে হলে আপনাকে আয়কর আইনে উল্লেখিত খাতে বিনিয়োগ করতে হবে।
আপনি হয়তো বিনিয়োগ করেছেন কিন্তু নিশ্চিত হয়ে নিন আয়কর আইনে উল্লেখিত খাতগুলোতে করেছেন কিনা। যদি উল্লেখিত খাতের মধ্যে আপনার বিনিয়োগ না পরে তাহলে কিন্তু আপনি যতোই বিনিয়োগ করেন না কেন ঐ বিনিয়োগের উপর কর রেয়াত দাবী করতে পারবেন না।
আয়কর আইনে একজন করদাতা কোন খাতে বিনিয়োগ করলে তার ওপর কর রেয়াত দাবী করতে পারবেন তার মধ্য থেকে নিচে ০৫টি সেরা বিনিয়োগ খাত আলোচনা করা হলো। আপনি এই খাতগুলোতে বিনিয়োগ করে একই সাথে যেমন কর রেয়াত সুবিধা নিতে পারেন আবার তেমনি সর্বোচ্চ মুনাফাও অর্জন করতে পারেন।
সঞ্চয়পত্র
সঞ্চয়পত্র যেকোন বিনিয়োগকারির জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয় বিনিয়োগ খাত। একদিকে মুনাফার হার বেশি এবং অন্যদিকে যেহেতু বাংলাদেশ সরকার এটা ইস্যু করে থাকে তাই মেয়াদান্তে মুনাফা এবং বিনিয়োগকৃত টাকা ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তা থাকে।
আপনি যে বছর বিনিয়োগ করবেন শুধুমাত্র ঐ বছরই তার উপর কর রেয়াত সুবিধা নিতে পারবেন। উল্লেখ্য, আপনি যে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করেছেন তা মেয়াদপূর্তির সময় পর্যন্ত ধরে রাখতে হবে। যেমন, আপনি যদি পাচ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করেন তাহলে পাচ বছরের আগে ভাঙানো যাবে না। যদি কোন কারনে এর আগে নগদায়ন করে ফেলেন তাহলে যে টাকার কর রেয়াত সুবিধা নিয়েছিলান তা বাতিল হয়ে যাবে।
“স্মার্ট মানি হ্যাকসঃ সঞ্চয় ও বিনিয়োগের সেরা খাত” বইটি এক্ষেত্রে আপনার অনেক কাজে আসতে পারে। বইটিতে মোট ২৮টি বিনিয়োগ খাত আলোচনা করা হয়েছে। অল্প অল্প করে সঞ্চয় করে কোথায় বিনিয়োগ করলে সর্বোচ্চ মুনাফা পাবেন তা তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি কোন মুনাফার উপর কর হার কম, কত পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারবেন, ঝুকি কম নিয়েও কীভাবে সবচেয়ে বেশি মুনাফা পাওয়া যায় ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় “স্মার্ট মানি হ্যাকসঃ সঞ্চয় ও বিনিয়োগের সেরা প্ল্যান” বইটি থেকে জানতে পারবেন। বইটি রকমারি-তে পাওয়া যাচ্ছে।
![](https://i0.wp.com/taxpert.jasimrasel.com/wp-content/uploads/2023/04/Smart-Money-Hacks-Book.jpg?resize=1000%2C1000)
ট্রেজারি বন্ড
আপনি ব্যাংক বা শেয়ার বাজার থেকে বাংলাদেশ সরকার ইস্যুকৃত এই ট্রেজারি বন্ড কিনতে পারবেন। বন্ড থেকেও তুলনামূলকভাবে বেশি হারে মুনাফা পাওয়া যায় এবং নিরাপদ। আপনি আপনার সুবিধামতো বিনিয়োগ করতে পারেন।
ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগের আগে মুনাফা কেমন পাবেন তা দেখে নিন। যদি ব্যাংক থেকে ট্রেজারি বন্ড কিনেন তাহলে যে ব্যাংক থেকে কিনেছেন ঐ ব্যাংক থেকেই নগদায়ন করতে পারবেন। আর যদি শেয়ার বাজার থেকে কিনেন তাহলে শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের মতোই কেনা-বেচা করতে পারবেন।
জীবন বীমা
ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার জন্য জীবন বীমা সুরক্ষা দেয়। যদিও জীবন বীমা সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা আছে তারপরেও আপনি নিজের এবং পরিবারের জন্য জীবন বীমা করুন। ভালো কোম্পানির কাছ থেকে যদি পলিসি নেন তাহলে মেয়াদান্তে টাকা পাওয়া নিয়ে কোন অনিশ্চয়তা থাকবে না।
সারা বছর ধরে আপনার নিজের, স্বামী/স্ত্রীর, ছেলেমেয়ের জন্য যে প্রিমিয়াম দিয়েছেন তা বিনিয়োগ ভাতা হিসেবে দেখাতে পারবেন এবং তার উপর কর রেয়াত সুবিধা নিতে পারবেন।
শেয়ার
যদিও বর্তমানে শেয়ার বাজারের অবস্থা ভালো না তারপরেও আপনি যদি এই খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী থাকেন বা এই খাতে যদি বিনিয়োগ ইতোমধ্যেই থেকে থাকে তাহলে নতুন করে বিনিয়োগ করতে পারেন। তবে এখন আপনি যদি বিনিয়োগ করেন তাহলে দীর্ঘ মেয়াদের কথা চিন্তা করে করবেন।
শেয়ার বিনিয়োগের ক্ষেত্রে একটা প্রশ্ন থাকে, গত বছরের শেয়ার বিক্রয় করে আবার নতুন করে শেয়ার কিনলে কী তার উপর কর রেয়াত পাওয়া যাবে?
এর উত্তর হলো, আপনি গত বছরের তুলনায় এ বছর যদি অতিরিক্ত কোন টাকা বিনিয়োগ করে থাকেন তাহলে আপনি ঐ নতুন বিনিয়োগকৃত টাকার উপর কর রেয়াত সুবিধা পাবেন।
ডিপিএস
ডিপিএস আমাদের দেশে খুবই জনপ্রিয়। প্রতি মাসে অল্প অল্প করে জমিয়ে একটা নির্দিষ্ট সময় পরে ভালো একটা অংক পাওয়া যায়। এবং এই টাকা দিয়ে বড় কোন কাজ করা যায়।
আপনি যেকোন ব্যাংকে এই ডিপিএস করতে পারেন। তবে এখানে আপনাকে মনে রাখতে হবে, মাসে পাচ হাজার টাকা বা বছরে ৬০,০০০ টাকা পর্যন্ত কর রেয়াত দাবী করা যায়।
উপরে আপনি পাচটি বিনিয়োগ খাত সম্পর্কে জানলেন যা আয়কর আইনে উল্লেখ রয়েছে। আপনি এবার আপনার পছন্দ মতো খাতে বিনিয়োগ করুন। এবং সম্পূর্ণ বিনিয়োগ ভাতার উপর কর রেয়াত সুবিধা ভোগ করার জন্য চেষ্ঠা করুন। এতে করে আপনার করের পরিমান অনেকাংশে কমে যাবে।