কিছুদিন আগে ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড ব্যাংক ইন্টারেস্ট রেট ০.৫০% থেকে কমিয়ে ০.২৫%-এ নির্ধারন করেছে। ব্যাংকের মনিটারি পলিসি কমিটি (এমপিসি)-র নয় সদস্যের সবাই এই রেট কমানোর পক্ষে একমত পোষণ করেছেন।
২০০৯ সালের পর ইন্টারেস্ট রেট এতো রেকর্ড হারে কমলো।
আরো শোনা যাচ্ছে, এমপিসি-র বেশির ভাগ সদস্যই বলেছেন, এই ইন্টারেস্ট রেট কমার ফলে তারা যেটা আশা করছেন যদি সেরকম কাজে দেয় তাহলে সামনে ইন্টারেস্ট রেট কমিয়ে একদম শূন্যের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া হবে।
শুধু ইন্টারেস্ট রেট কমিয়েই ক্ষান্ত হননি, এর বাইরে ব্যাংক একশত বিলিয়ন পাউন্ড এর একটা স্কীম করবে যেটা অন্যান্য ব্যাংকের মাধ্যমে কম ইন্টারেস্ট রেটে বাড়ি এবং ব্যাবসায়ের জন্য লোন দেয়া হবে।
শংকা করা হচ্ছে এর সুবিধা হয়তো সাধারন জনগণ পুরোপুরি পাবেন না।
তাই ব্যাংকের গভর্নর বলেছেন, ইন্টারেস্ট রেট কমার ফলে যদি ব্যাংকগুলো কাস্টমারদের কে কম রেটে লোন না দেয় তাহলে তাদের পেনাল্টি করা হবে।
গণভোটের আগে ধারনা করা হয়েছিলো, যদি ইইউ থেকে ইউকে বেরিয়ে যাওয়ার পক্ষে রায় আসে তাহলে ইউকে-কে রিসেশন এর মুখে পরতে হবে যদি না ব্যাংক সঠিকভাবে স্টেপস না নেয়।
এবং সত্যিই ইউকে ইউরো থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর তাদের অর্থনীতিতে লক্ষ্য করার মত কিছু পরিবর্তন দেখা যাচ্ছিলো। আর তাই তারা এই সিদ্ধান্ত নিলো।
এখন ব্যাংক ইন্টারেস্ট রেট কমার ফলে কার কি হবে?
ফ্যামিলি বাজেটে এর প্রভাব কি হবে?
খুব সহজেই বুঝা যাচ্ছে এর ফলে দুই ক্যাটেগরির মানুষ প্রভাবিত হবেন।
এক. যারা লোন নিয়েছেন।
দুই. যারা ডিপোজিট রেখেছেন।
ব্যাংক ইন্টারেস্ট রেট কমলে যারা লোন নিয়েছেন তারা লাভবান হবেন। কারন এখন থেকে তাদেরকে আগের চেয়ে কম ইন্টারেস্ট পরিশোধ করতে হবে। এর ফলে তাদের লোন ইন্সটলমেন্ট সাইজ কমে যাবে।
আর বিপরীতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন যারা ব্যাংকে ডিপোজিট রেখেছেন। তারা আগের চেয়ে ইন্টারেস্ট কম পাবেন। তাদের মাসিক আয় কমে যাবে। তাদের পারিবারিক বাজেট বিঘ্নিত হবে।
কাউন্সিল ফর মর্গেজ লেন্ডারস এর মতে, ইউকে-তে সবচেয়ে বেশি লোন আছে হাউজিং সেক্টরে যা ধারনা করা হচ্ছে এর সংখ্যা হবে ১১.১ মিলিয়ন।
আর প্রতি হাউজিং লোন এর এভারেজ পরিমান হবে ১১৬,০০০ পাউন্ড।
যারা ২১১,০০০ পাউন্ড হাউজিং লোন নিয়েছেন ২৫ বছরের জন্য তাদের মাসিক পেমেন্ট কমবে ২২ পাউন্ড করে।
কত লোন নিলে মাসিক কত পেমেন্ট কমবে তার একটি তুলনামূলক চিত্র টেবিল এর মাধ্যমে বিবিসি-র রিপোর্টে প্রকাশ করা হয়েছে।
তবে ইন্টারেস্ট রেট কমার ফলে কে কেমন বেনিফিটেড হবেন তা নির্ভর করে তার লোন এর প্রকৃতির উপর।
যেমন কেউ যদি ভেরিয়েবল রেটে লোন নিয়ে থাকেন তাহলে তারা বেনিফিটেড হবেন। আর যারা ফিক্সড রেটে লোন নিয়েছেন তারা এই ঐতিহাসিক রেট কমার ফলেও বেনিফিটেড হবেননা। এর আওতায় পড়েন ইউকে-র প্রায় অর্ধেক অর্থাৎ ৪৬% ঋণগ্রহিতা।
আবার যারা ভেরিয়েবল রেটে লোন নিয়েছেন তারা ইন্টারেস্ট রেট কমার সাথে সাথেই এই সুবিধা পাবেন না। তাদেরকে আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
বাংলাদেশে এখন ইন্টারেস্ট রেট খুবই কম। প্রায়ই খবর প্রকাশিত হয় ডিপোজিটরদেরকে ৫% এর নিচে ইন্টারেস্ট দিলেও ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে ডাবল ডিজিটের ইন্টারেস্ট নেয়া হচ্ছে।
কিন্তু কি কারনে নেয়া হচ্ছে তা যদি রিপোর্টে থাকতো তাহলে পাঠকদের জন্য বুঝতে সুবিধা হতো।
প্রথমেই যে কারনটি ইতোমধ্যে উপরে বলা হয়েছে তাহলো যদি কেউ ফিক্সড রেটে লোন নিয়ে থাকেন তাহলে ইন্টারেস্ট রেট কম হলেও তিনি এর বেনিফিট পাবেন না।
আর আরেকটি কারন যেটা এই লেখক একটি বেসরকারি ব্যাংকের উর্দ্ধতন কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানা গেছে তাহলো, যে সব কাস্টমারদের কাছ থেকে তারা ডিপোজিট নিয়েছেন যে একটি নির্দিষ্ট সময় পরে তাদের টাকা দ্বিগুন করে দেয়া হবে তাদেরকে সময় শেষে কম দেয়া যাবে না।
ব্যাংক অলরেডি তাদের কাছে কমিটেড। তারা যদি এখন কমিটমেন্ট না রাখেন তাহলে কাস্টমারদের ট্রাস্ট তারা হারাবেন। এবং এর সাথে আছে বিভিন্ন ধরনের ডিপিএস। এইগুলিও কমিটেড।
যার কারনে ইন্টারেস্ট রেট কমলেও ব্যাংকের কস্ট অফ ফান্ড ইমিডিয়েটলি কমেনি। আর এজন্য তারা ইন্টারেস্ট রেট কমলেও এর সুফল এখনই কাস্টমারদেরকে দিতে পারছেন না। এর জন্য সময় লাগবে।
এদিকে ব্যাংক ইন্টারেস্ট রেট যখন কমছে তখন সাথে সাথেই শেয়ার প্রাইস বেড়ে গেছে। ঐদিন দিন শেষে ১০৫ পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়েছে।
কেন শেয়ার প্রাইস বাড়লো?
এর একটি কারন হলো, যেহেতু ব্যাংকে সেভিংস টাকার উপর কম ইন্টারেস্ট পাওয়া যাবে তাই তারা এখন থেকে সেভিংস এর পরিমান কমিয়ে দিবেন এবং সেই টাকা তারা শেয়ার মার্কেটে ইনভেস্ট করবেন।
যদি তাই হয় এবং সবাই যদি শেয়ার মার্কেটে ইনভেস্ট করে তাহলে সেখান থেকে কি রিটার্ন বেশি পাওয়া যাবে?
কম্পানিগুলো যদি বেশি প্রফিট না করে তাহলে বেশি করে ডিভিডেন্ট দিতে পারবেনা। আর বেশি করে ডিভিডেন্ট দিতে না পারলে রিটার্নও বেশি আসবে না।
তাহলে ইনভেস্টররা কি ভুল করছেন?
এর উত্তর হলো, ব্যাংক থেকে যেহেতু তারা রিটার্ন কম পাবেন তাই মানুষের সেভিংস করার প্রবণতা কমে গিয়ে খরচ করার প্রবণতা বেড়ে যাবে।
এতে করে ইকনমি বোস্ট হবে। ব্যবসায়ীরা বেশি করে টাকা ইনভেস্ট করবেন। ব্যবসার অবস্থা ভালো হবে। তাহলেই ইনভেস্টররা বেশি করে রিটার্ন পাবেন।
কিন্তু বাংলাদেশে ইন্টারেস্ট রেট কম হলেও এই ফর্মুলা কেন প্রভাব ফেলছে না?
এর একটি বড় কারন হলো দুইটি ইতিহাস।
একটি ১৯৯৬ এবং অন্যটি ২০১০।
ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা পকেটের টাকা হারিয়ে শেয়ার মার্কেট থেকে তাদের বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছেন। যার কারনে এই ফর্মুলা কাজে আসছে না।
আশা করা হচ্ছে, ইউকে-তে শেয়ারের প্রাইস আরো বৃদ্ধি পাবে কারন ইনভেস্টমেন্ট কম্পানিগুলো ইন্টারেস্ট রেট কমার ফলে বেশি করে লোন নিবে যা দিয়ে তারা শেয়ার মার্কেটে ইনভেস্ট করবে।
এতোকিছু করার পরও ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড তাদের ভবিষ্যত অর্থনীতি নিয়ে কনফিডেন্ট থাকতে পারছে না। ইন্টারেস্ট রেট কমার ফলে আরো কিছু সেক্টরে অ্যাফেক্ট করেছে।
যেমন, ইন্টারেস্ট রেট কমার সাথে সাথেই পাউন্ড ফল করেছে। ডলার এবং ইউরোর বিপরীতে পাউন্ড ফল করেছে যথাক্রমে ১.৫% ($১.৩১২০) এবং ১.৩% (€১.১৭৯৯)। এর ফলে আমদানী করা পন্যের দাম বেরে যাবে যার ফলে ইনফ্লেশনও বেড়ে যাবে।
সেন্ট্রাল ব্যাংক প্রেডিক্ট করছে ইনফ্লেশন এখনকার চেয়ে ২% বেড়ে যাবে।
বেকারত্বের হার বাড়বে, আশা করা হচ্ছে আগামী বছরে বেকারত্বের হার হবে ৫.৪% এবং এর পরের বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালে গিয়ে দাড়াবে ৫.৬%-এ।
ইন্টারেস্ট রেট কমার সাথে সাথে জিডিপি গ্রোথ রেট ও তারা কমিয়েছে। ২০১৮ সালের জিডিপি গ্রোথ ২.৩% থেকে কমিয়ে ১.৮%-এ টার্গেট ফিক্সড করা হয়েছে।
ইন্টারেস্ট রেট কমার ফলে কিছু ক্ষেত্রে যেমন ইমিডিয়েট অ্যাফেক্ট হয়েছে তেমন অ্যাফেক্ট সবক্ষেত্রে এখনই বুঝা যাবে না। তার জন্য লম্বা সময় ধরে অপেক্ষা করতে হবে।
যেমন এর মধ্যে পড়ে পেনসন স্কীম, লাইফ ইন্সুরেন্স পলিসি। তবে অর্থনীতি ঠিক রাখার জন্য সবচেয়ে ভালো পলিসি গ্রহণ করা ছাড়া বিকল্প নেই।