২০১৬-১৭ অর্থ বছরে মোট ২,৪২,৭৫২ কোটি টাকা রেভিনিউ কালেক্ট করার টার্গেট ঠিক করেছে। এর মধ্যে এনবিআর-কে ২,০৩,১৫২ কোটি টাকা কালেক্ট করতে হবে। যা গত অর্থ বছরের তুলনায় ৩৫.৪% বেশি।
আর এদিকে ২০১৫-১৬ অর্থ বছরের রিভাইজড বাজেট পেশ করার সময় অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে এনবিআর তার রেভিনিউ অর্জন করতে পারবে না। কারন এনবিআর রিফর্ম করা এখনও শেষ হয়ে উঠেনি।
যেখানে অর্থমন্ত্রী নিজেই স্বীকার করলেন ২০১৫-১৬ অর্থ বছরের টার্গেট অর্জন হবেনা সেখানে তিনি কেন এতো বেশি টার্গেট ঠিক করলেন?
এতো উচ্চাবিলাসি টার্গেট কেন?
আর এই উচ্চাবিলাসের কারনে চাপের মূখে পরতে হবে করদাতাদেরকে।
উচ্চাবিলাসী বাজেটের আরেকটা কারন থাকতে পারে। সেটা হলো কিছুদিন আগেই আমরা জানতে পেরেছি, বাংলাদেশ নিন্ম মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে উন্নিত হয়েছে।
এবং এর আগে মিলিনিয়াম ডেবলেপমেন্ট গোল-এর বিশিরভাগ টার্গেটই বাংলাদেশ অর্জন করতে পেরেছে। এখন সাস্টেইনেবল ডেবলেপমেন্ট গোল-এর টার্গেট অর্জন করতে হবে।
অর্থমন্ত্রী এবারের বাজেট-এ বাংলাদেশের জিডিপি গ্রোথ প্রেডিক্ট করেছেন ৭.০৫।
আর মাথাপিছু আয় ধরেছেন ১,৪৬৬ ইউএস ডলার।
এই উচ্চাবিলাসী টার্গেট যে এনবিআর এর পক্ষে পূরণ করা সম্ভব না সেটা বুঝেই হয়তো তিনি করদাতাদের সুযোগ সংকোচনের পথ বেছে নিয়েছেন।
তিনি বলেন, আগামী বছরগুলোতে ট্যাক্স এক্সেম্পশন সঙ্কুচিত করা হবে এবং এর সাথে সাথে ট্যাক্সের আওতা ও পরিধি বাড়ানো হবে। এ ব্যাপারে তিনি তার দৃড় অবস্থান ব্যাক্ত করেন।
ট্যাক্স বিষয়ে তার দৃঢ় অবস্থানের পক্ষে বাংলাদেশের সাথে অন্যান্য দেশের কিছু তুলনামূলক ডেটা উপস্থাপন করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় খুবই কম যা বর্তমানে ১০.৩%। কিন্তু আমাদের পাশের দেশেগুলোতে তা ২০% থেকে ৩২%।
আগামী ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে তা ১৫.৩% করার কথা বলেন।
এই টার্গেট পূরণ করেতে তিনি ট্যাক্স ছাড় ধীরে ধীরে কমিয়ে আনার কথা বলেন।
তিনি এ সময় জানান, ইতোমধ্যেই তিনি এ বিষয়ে সচিবদের সাথে কথাও বলেছেন। তার এ কথায় বুঝাই যাচ্ছে কেন এবার করদাতাদের দিকটা কম বিবেচিত হয়েছে।
এখন বাংলাদেশে ট্যাক্স দিয়ে থাকেন ১২ লাখ। এই সংখ্যা আরো তিন লাখ বাড়ানোর কথা তিনি বলেন। করদাতার ঝামেলা যাতে কম হয় সেই উদ্যোগ নেয়া হবে বলে তিনি জানান।
যারা ট্যাক্স দিয়ে থাকেন তাদের গতবারের তুলনায় এবার তেমন কোন পরিবর্তন হয়নি।
আগে করদাতারা যে সুবিধাগুলো পেতেন তা সংকোচন করা হয়েছে।
প্রথমেই আসে বিনিয়োগের কথা।
কর নির্ধারনের সময়, বিনিয়োগ বলতে তিনটি অপশনের মধ্যে যেটি কম তাকে ধার্য করা যেত।
প্রকৃত বিনিয়োগ অথবা মোট আয়ের ৩০% অথবা দুই কোটি। কিন্তু এখন মোট আয়-কে ৩০% থেকে কমিয়ে ২৫% অথবা এক কোটি পঞ্চাশ লাখ টাকার মধ্যে যেটি কম তা বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য হবে।
অন্যদিকে এই নির্ধারিত বিনিয়োগের উপর আগে ১৫% হিসেবে যে রেয়াত পাওয়া যেত তাকে এখন ১৫%, ১২% এবং ১০% এই তিনটি ধাপে ভাগ করে কর রেয়াত দেয়া হয়েছে।
বুঝা যাচ্ছে সরকার ব্যাক্তিখাতে বিনিয়োগকে নিরোৎসাহিত করেছেন।
এটার একটি কারন হতে পারে, জনগণ এখন থেকে সঞ্চয় কম করে বেশি করে খরচ করবে। এতে করে ব্যাংকে সঞ্চয়ের পরিমান কমবে।
বিপরীত দিক দিয়ে ব্যাংকে যদি নগদ টাকার পরিমান কম থাকে তাহলে এখন যে ইন্টারেস্ট রেট কম তা বাড়বে।
আরেকটা বিষয়ে সরকারের দৈত্ব নীতি দেখা যায় সেটা হলো, অর্থমন্ত্রী এইবার প্রথমবার ঘোষণা করেছেন সবার জন্য পেনসন স্কীম চালো করার। একদিকে তিনি ব্যাক্তিখাতে সঞ্চয়কে নিরোৎসাহিত করছেন অন্যদিকে জাতীয়ভাবে তিনি সঞ্চয়ের কথা বলছেন।
সুযোগ সংকোচিত হওয়ার ফলে করদাতাদের ট্যাক্সের পরিমান বেড়ে যাবে। এবার প্রদর্শিত নীট সম্পদের উপর সারচার্জ ধার্য করার ধাপ যেমন বেড়েছে তেমনি পরিধিও বেড়েছে।
গত অর্থ বছরে সারচার্জ রেট ছিলো সর্বোচ্চ ২৫% যা এবার বেড়ে ৩০% পর্যন্ত হয়েছে।
এর যুক্তি হিসেবে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের জিডিপি গত দুই দশক ধরে গড়ে ৬% এর বেশি করে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই মানুষের সম্পদের পরিমানও বেড়েছে।
যদিও গরীব –ধনীর মধ্যে আয় বৈষম্য রয়েই গেছে।
একেবারে নতুন কিছু বিষয় এবার যুক্ত হয়েছে।
এর মধ্যে একটি হলো যারা মাসে ১৬,০০০ টাকা বা তার বেশি বেসিক বেতনে চাকরি করবেন তাদের জন্য এখন থেকে ট্যাক্স রিটার্ন বাধ্যতামুলক করা হয়েছে।
সবচেয়ে বেশি আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে ফাইনাল সেটেলম্যান্ট যেটা ৮২ (সি) হিসেবে বেশি পরিচিত ছিলো সেটা বিলুপ্ত করে মিনিমাম ট্যাক্স প্রচলন করা হয়েছে।
যুক্তি হিসেবে অর্থমন্ত্রি বলেন, এই প্রথা আগে থেকেই পৃথিবীর অন্যান্য দেশে প্রচলিত রয়েছে। তাই বাংলাদেশেও এই প্রথার প্রচলন করা হলো।
মিনিমাম ট্যাক্সের সাথে আগে ব্যবসায়ীরা পরিচিত ছিলেন। কিন্তু এবার থেকে ব্যাক্তি করদাতাগণও পরিচিত হবেন।
রেগুলার ট্যাক্স যদি মিনিমাম ট্যাক্স থেকে কম হয় তাহলে তিনি তা সমন্বয় করতে পারবেন না। এটাই হলো অসুবিধা।