Tax

করোনাভাইরাসঃ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড যা করতে পারে

April 6, 2020
Coronavirus Tax Impact in Bangladesh

বিক্রি বন্ধ। বাসা থেকে কাজ চলছে ২৬ মার্চ থেকে। শুধু মেইল বা ফোনে যোগাযোগ চলছে। লেনদেন প্রায় বন্ধ।

কিন্তু এমন অবস্থায় করদাতাকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এর নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে আয়কর বিবরণী দাখিল করতে হবে। যেমন, ভ্যাট রিটার্ন এবং উৎসে কর কর্তন এর উপর প্রতি মাসে দুইটি রিটার্ন জামা দিতে হয়।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিবরণী দাখিল করতে ব্যর্থ হলে জরিমানা দিতে হয়।

একদিকে বিক্রি বন্ধ অন্যদিকে বাসা থেকে কাজ করাতে আর্থিক লেনদেনও প্রায় বন্ধ। অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানই হাতে বা ব্যাংকে টাকা বসিয়ে রাখে না। সব সময় তারা টাকা খাটিয়ে তার উত্তম ব্যবহারটা করতে চান।

আবার যখন অফিস বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা শুনা যাচ্ছিলো তখন জরুরী অনেক দেনা পরিশোধ করার তাগিদ ছিলো। এ দেনা পরিশোধ করতে গিয়েও ব্যবসায়ীদের ব্যাংকে জমা টাকার পরিমান কমে গেছে।

এখন ব্যাংকে যদি টাকা না থাকে তাহলে তারা কিভাবে কর জমা দিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্ধারত সময়সীমার মধ্যে বিবরণী জমা দিবে?

এই প্রশ্ন এখন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক বিভাগের সাথে যারা জড়িত আছেন তাদের সবার। গত কয়েকদিন ধরেই এই প্রশ্ন করে আসছেন তাদের কর পরামর্শকদের কাছে। কিন্তু কর পরামর্শকরা এর কোন উত্তর দিতে পারছেন না। এর কারন হলো, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা অর্থ মন্ত্রনালয় এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোন প্রজ্ঞাপন বা আদেশ জারি করেনি।

তবে এক্ষেত্রে বলা যায়, অনেক এগিয়ে আছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তারা সময়ে সময়ে বিভিন্ন ধরনের দিক নির্দেশনা এবং পদক্ষেপ নিচ্ছে।

একদম শুরুতে যখন কোভিড-১৯ পরীক্ষা করার জন্য কীট আমদানি করার কথা উঠে তখন খুব তড়িৎ গতিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সব ধরনের কর ছাড় দিয়ে আদেশ জারি করেছিলো। তাহলে এখন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা অর্থ মন্ত্রনালয় কি করতে পারে?

বাংলাদেশের পাশাপাশি পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। সেসব দেশ যেমন ব্যবসায়ীসহ সাধারন মানুষের জন্য আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করেছে তেমনি এর সাথে কর বিষয়ক বিভিন্ন সুবিধাও ঘোষণা করেছে।

ব্যক্তি করদাতা হোন আর কোম্পানি করদাতা হোন, দিন শেষে তার আয়ের উপর করের বোঝা কেমন হবে তা বুঝেই তারা সিদ্ধান্ত নেন।

সবার আগে চীনের একটি প্রদেশে এই রোগ ধরা পড়ে। তাই এখানে চীন ব্যক্তি এবং ব্যবসায়ী পর্যায়ে যেসব কর সুবিধা এবং কিছু ক্ষেত্রে নমনীয় নীতি গ্রহণ করেছে তা আলোচনা করতে পারি।

যারা কোভিড-১৯ চিকিৎসা সেবার সাথে জড়িত তাদের জন্য যে আর্থিক বোনাস দেয়া হবে তা আয়কর মুক্ত থাকবে। কোভিড-১৯ আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য সামনে থাকেন ডাক্তার এবং নার্স। এ কাজ করতে গিয়ে কিছু ডাক্তার এবং নার্সও আক্রান্ত হয়েছেন এবং পরে কিছু মারা যাওয়ার খবরও বের হয়েছে।

মৃত্যু ঝুকি নিয়ে যেসব ডাক্তার কোভিড-১৯ রোগিদের সেবা দিবেন তারা তাদের হাসপাতাল থেকে যদি কোন বোনাস পান তাহলে তা করমুক্ত রাখা হয়েছে। অর্থাৎ তিনি দুই দিক থেকেই যাতে আর্থিক সুবিদা পান তা বিবেচনা করা হয়েছে।

মৃত্যু ঝুকি আর্থিক প্রনোদনা থেকে বড় না। একজন মানুষের যদি জীবনই না থাকে তাহলে তার কাছে অর্থ মূল্যহীন। তাহলে সেবা কি বন্ধ হয়ে যাবে? মৃত্যু ঝুকি কমানোর জন্য প্রতিরোধমূলক সরঞ্জামাদি ব্যবহার করে ডাক্তার এবং নার্সরা সেবা দিচ্ছেন।

আবার যারা এগুলো তৈরিতে কাজ করবেন তাদেরও রয়েছে ঝুকি। তাদেরও দরকার হতে পারে প্রতিরোধমূলক সরঞ্জামাদি এবং আক্রান্ত হয়ে গেলে ঔষধ। এসবের উপর চীনে দেয়া হয়েছে করমুক্ত সুবিধা।

যে প্রতিরোধমূলক সরঞ্জামাদি পড়ে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হবে তা আগে তৈরি করতে হবে। আর একাজ করেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা যখন কোথাও বিনিয়োগ করেন তখন তাকে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা করতে হয়। কারন, ব্যবসা থেকে রাতারাতি মুনাফা আসে না।

কিন্তু করোনাভাইরাসের মেয়াদ কতোদিন বা কতো বছর?

বিজ্ঞানীরা চেষ্ঠা করছেন খুব দ্রুত ভ্যাকসিন আবিস্কার করতে। ধারনা করা হচ্ছে, সময় লাগতে পারে আঠার মাস।

ব্যবসায়ে যে স্থায়ী সম্পদ কেনা হয় তা আয়কর আইনে উল্লেখিত হারে কয়েক বছর ধরে খরচ যেটা অবচয় হিসেবে পরিচিত তা দেখিয়ে যেতে হয়। কিন্তু যেসব ব্যবসায়ী প্রতিরোধমূলক সরঞ্জামাদি তৈরি করার জন্য স্থায়ী সম্পদ কিনবেন আঠার মাস পর তার কি হবে?

এ প্রতিবন্ধকতা দূর করতে চীন প্রতিরোধমূলক সরঞ্জামাদি এবং চিকিৎসা সরঞ্জামাদি তৈরি করতে যদি কোন স্থায়ী সম্পদ কিনেন তাহলে তার সম্পূর্ণটাই যে বছর ক্রয় করা হয়েছে সে বছরের খরচ হিসেবে দেখিয়ে করযোগ্য আয় গণনা করতে পারবে।

তবে এ ধারনাটা আয়কর আইনে নতুন কোন বিষয় না। গবেষণা বিষয়ক কাজের ক্ষেত্রে যে বছর স্থায়ী সম্পদ ক্রয় করা হয় সে বছর পুরোটাই খরচ হিসেবে দেখিয়ে করযোগ্য আয় বের করার নিয়ম আছে। চীন এই সুবিধা কোভিড-১৯ এর ক্ষেত্রেও দিয়েছে।

যারা সরাসরি কোভিড-১৯ এর চিকিৎসা এবং প্রতিরোধমূলক সরঞ্জামাদি উৎপাদনের সাথে জড়িত তাদের জন্য যেমন কর সুবিধা ঘোষণা করা হয়েছে আবার তেমনি যারা এই সময়ে অনুদান দিবেন তাদের জন্যও কর সুবিধা ঘোষণা করা হয়েছে। চীনে যেসব কোম্পানি অনুদান দিবে তা করযোগ্য আয় গণনার সময় সম্পূর্ণ বাদ দিতে পারবে।

উপরে ব্যবসায়ীদের যে সুবিধাগুলো চীন দিয়েছে তা একটা কোম্পানি ভোগ করতে পারে যদি তার মুনাফা হয়। যেখানে ব্যবসা বন্ধ সেখানে মুনাফার কথাতো অকল্পনীয়। তাই ২০২০ সালে যে ক্ষতি হবে তা পরবর্তী আট বছর জের টানতে পারবে যা বর্তমানে চীনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো পাচ বছর পর্যন্ত এ সুবিধা পাচ্ছে। এর অর্থ হলো, কোন কোম্পানির যদি এই বছরে ক্ষতি হয় তা আগামী আট বছর পর্যন্ত আগে তার মুনাফা থেকে বাদ দিবে। তারপর যদি মুনাফা থাকে তাহলে ব্যবসায়ী তার উপর কর দিবে।

লাভ-ক্ষতির হিসেবতো ব্যবসায়ীরা করবেন বছর শেষে। কিন্তু এখনতো উৎসে কর কর্তন এবং অগ্রিম কর পরিশোধ করতে হবে। এবং এ সম্পর্কিত বিবরণীও দাখিল করতে হয়। যেখানে ব্যবসা বন্ধ সেখানে এগুলো অপ্রাসংগিক। তাই ফেব্রুয়ারি এবং মার্চ মাসে যে কর বিবরণী দাখিল করতে হবে তার সময় চীন বৃদ্ধি করেছে। এবং এর জন্য কোন জরিমানাও দিতে হবেনা।

বাংলাদেশে উৎসে করের তুলনায় অগ্রিম করের বৈশিষ্ট ভিন্ন। অগ্রিম কর দিতে হয় করযোগ্য আয়ের উপর। গত এক মাস ধরে ব্যবসা হচ্ছেনা এবং এ অবস্থা আগামী কতোদিন চলতে থাকে তার নেই কোন পূর্বাভাস।

অগ্রিম কর ভবিষ্যত আয় অনুমান করে আনুমানিক করযোগ্য আয় বের করে কর পুন:গণনা করা যায়। এখন ব্যবসায়ীরা কিসের উপর ভিত্তি করে কর পুন:গণনা করবেন এটা একটা বড় প্রতিবন্ধকতা। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের সময় দেয়াটা যুক্তিযুক্ত হবে।

চীনের পর করোনাভাইরাস একে একে অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। এবং সেসব দেশও প্রায় একই ধরনের সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যেই ঘোষণা করেছে যাদের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইতালি, মালয়শিয়া ইত্যাদি।

বাংলাদেশে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা অর্থ মন্ত্রনালয় উপরের বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে ব্যক্তি করদাতা এবং কোম্পানি করদাতাদের জন্য কর সুবিধা উল্লেখ করে প্রজ্ঞাপন বা আদেশ জারি করতে পারে।

You Might Also Like

error: Content is protected !!