Tax

সরকারি চাকরীজীবীর আয় ও কর পরিগণনার নিয়ম

January 13, 2018
Govt. Employees Return Image

আপনি কি সরকারি বেতন আদেশভুক্ত কর্মচারি? এবং আপনার মাসিক মূল বেতন কি ১৬ হাজার টাকা বা তার বেশি? তাহলে এই বছর ৩০ নভেম্বরের মধ্যে আপনাকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হবে।

সরকারি আদেশভুক্ত কর্মচারি কারা তা অর্থ মন্রণালয়ের অর্থ বিভাগ কর্তৃক জারীকৃত আদেশে বলা হয়েছে। আর তাদের আয়কর কিভাবে গণনা করতে হবে তা ২১ জুন ২০১৭ তারিখে এস,আর,ও নং ২১১-আইন/আয়কর/২০১৭-তে উল্লেখ রয়েছে।

এ  প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, সরকারি বেতন আদেশভুক্ত একজন কর্মচারীর সরকার কর্তৃক প্রদত্ত মূল বেতন, উৎসব ভাতা ও বোনাস (যে নামেই হোক না কেন) করযোগ্য আয় হিসেবে বিবেচিত হবে। এর বাইরে অন্যান্য ভাতা ও সুবিধাদি যেমন, বাড়ি ভাড়া ভাতা, চিকিৎসা ভাতা, যাতায়াত ভাতা, শ্রান্তি বিনোদন ভাতা, বাংলা নববর্ষ ভাতা ইত্যাদি করমুক্ত থাকবে।

কিন্তু বেসরকারি চাকরীজীবীর বেতন থেকে আয় গণনার ক্ষেত্রে আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪-এর বিধি-৩৩ অনুযায়ী করতে হয়। যা সরকারি চাকরীজীবীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। তাই, বেসরকারি চাকরীজীবীর চেয়ে সরকারি চাকরীজীবীর আয় এবং তার উপর কর গণনা করা অনেক সহজ।

নিচের যে উদাহরণ আমরা ব্যবহার করেছি তা থেকে কিভাবে একজন সরকারি চাকরিজীবী করযোগ্য আয়, কর রেয়াত, করদায় গণনা করবেন এবং রিটার্ন তৈরি করবেন তার উপর আমাদের একটি অনলাইন কোর্স রয়েছে।

কোর্সটিতে আমরা এক্সেল শিটে কর গণনা দেখিয়েছি এবং রিটার্ন তৈরিও দেখিয়েছি। এবং যারা আমাদের কোর্সটি করবে তাদেরকে আমরা এক্সেল শিটের সফট কপি দিয়ে দিবো যাতে করে তারা এর উপর নিজের কর গণনা করে রিটার্ন তৈরি করতে পারেন।

০১। মাসিক মূল বেতন ৩৫,৫০০

০২। মাসিক চিকিৎসা ভাতা ৭০০ টাকা

০৩। উৎসব ভাতা ৭১,০০০ টাকা

০৪। বাংলা নববর্ষ ভাতা ৭,১০০ টাকা

০৫। মি করিম সরকারি বাসায় থাকেন।

উপরের উদাহরণ ব্যবহার করে ধাপে ধাপে আপনি কিভাবে কর গণনা করবেন এবং রিটার্ন তৈরি করবেন তা আলোচনা করবো।

মোট করযোগ্য আয়

যেহেতু আপনি সরকারি কর্মচারি তাই প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী শুধু মূল বেতন এবং উৎসব ভাতা ছাড়া আর কিছুই করযোগ্য আয়ের সাথে যোগ হবে না। অর্থাৎ চিকিৎসা ভাতা এবং বাংলা নববর্ষ ভাতা সম্পূর্ণ আয়কর মুক্ত।

আপনি কর আইন অনুযায়ী কর অব্যাহতিগুলো বাদ দিয়ে আপনার করযোগ্য আয় বের করুন। আপনার করযোগ্য আয় বের হয়ে গেলে তার উপর আপনি কর ধাপ অনুযায়ী কর হার ব্যবহার করে করদায় নির্ণয় করুন।

এই লেখাটির উপর ভিত্তি করে আমাদের একটি ভিডিও রয়েছে। নিচে আপনার জন্য ভিডিওটি দেওয়া হলো।

কর দায় পরিগণনা

আমরা জানি অর্থ আইন ২০২০-এ একজন পুরুষ করদাতার করমুক্ত আয়ের সীমা ২.৫ লাখ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ০৩ লাখ টাকা করা হয়েছে। এবং কর হার ১০% থেকে কমিয়ে ৫% দিয়ে শুরু হবে। কর ধাপ অনুযায়ী কর হারেও এসেছে পরিবর্তন।

এবার আপনি আপনার করযোগ্য আয়ের উপর কর ধাপ অনুযায়ী কর হার ব্যবহার করে করদায় বের করুন। তবে করদায় গণনার আগে আবশ্যই দেখে নেন আপনার করযোগ্য আয় ০৩ লাখ টাকা অতিক্রম করেছে কিনা। আর মহিলা করদাতাদের ক্ষেত্রে করমুক্ত আয়ের সীমা ৩.৫ লাখ টাকা অতিক্রম করলেই করদায় গণনা করুন।

আপনি করদায় দেখে চমকে উঠেছেন?

আপনি হয়তো কর রেয়াতের কথা শুনেছেন। কর রেয়াত একজন করদাতার করদায় অনেকাংশে হ্রাস করে থাকে। কিন্তু কর রেয়াত পেতে হলে নির্দিষ্ট কিছু খাতে বিনিয়োগ বা অনুদান দিতে হবে। কেবল তখনই করদাতা কর রেয়াত দাবি করতে পারবেন।

কর রেয়াত গণনা

একজন করদাতা সর্বোচ্চ কতো বিনিয়োগ সুবিধা পাবেন তা আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪-তে বলা আছে। সেখানে তিনটি অংকের কথা বলা হয়েছে। তবে একজন ব্যাক্তি করদাতা তার করযোগ্য আয়ের সর্বোচ্চ ২৫% পর্যন্ত বিনিয়োগ হিসেবে দেখাতে পারবেন যার উপর নির্দিষ্ট হারে কর রেয়াত দাবি করতে পারবেন।

তবে আপনাকে যে বিনিয়োগ ভাতার সীমা দেওয়া হয়েছে তা যদি আপনি না করেন তাহলে আপনি কর রেয়াত দাবি করতে পারবেন না। তাই আপনাকে আয়কর আইন অনুযায়ী উল্লেখিত খাতে বিনিয়োগ করতে হবে। কেবল তবেই আপনি কর রেয়াত দাবি করতে পারবেন।

নিচের ভিডিওটি দেখে জেনে নিতে পারেন কোথায় বিনিয়োগ করলে আপনার সেই বিনিয়োগ কর রেয়াত পাওয়ার জন্য বিবেচিত হবে।

আপনি যদি উল্লেখিত খাতে বিনিয়োগ করেন তাহলে, আপনি কর রেয়াত এর যে হার আছে সেই হার ব্যবহার করে কর রেয়াত গণনা করবেন। আপনার করযোগ্য আয় যদি ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত হয় তাহলে আপনার বিনিয়োগ ভাতার উপর ১৫% কর রেয়াত পাবেন।

আর করযোগ্য আয় যদি ১৫ লাখ টাকার বেশি হয় তাহলে বিনিয়োগ ভাতার উপর ১০% কর রেয়াত দাবি করতে পারবেন।

আপনার করদায় থেকে কর রেয়াত বাদ দেওয়ার পর যে অংকটি বেড়িয়ে আসবে তা হলো নীট করদায়। এইটাই সরকার আপনার কাছে পাবে।

নীট কর দায়

বেতন দেওয়ার সময় নিয়মমত উৎসে কর কেটে রাখতে হয়। আপনার বেতন থেকে সারা বছরে যে পরিমান টাকা উৎসে কর কর্তন করেছে এবং আপনার যদি আরো কোন আয় থেকে কর কর্তন করা হয় তাহলে তা যোগ করে করদায় থেকে বাদ দিন।

বাদ দেওয়ার পর যা থাকবে সেটা আপনি যখন রিটার্ন দাখিল করবেন তখন চালান বা পে অর্ডার করে জমা দিতে হবে।

দরকারি কাগজপত্র

রিটার্ন তৈরি করার আগে আপনাকে কিছু দরকারি কাগজপত্র সংগ্রহ করতে হবে। কারন এই কাগজগুলো রিটার্ন তৈরি করতে লাগবে এবং রিটার্ন এর সাথে ট্যাক্স সার্কেল-এ দাখিল করতে হবে।

যেমন আপনার বেতন যে ব্যাংকে ট্রান্সফার হয়েছে তার ব্যাংক বিবরণী, বেতন বিবরণী, বীমা করা থাকলে প্রমিয়ামের কাগজ, ডিপিএস থাকলে তার ব্যাংক বিবরণী, চালান ইত্যাদি।

রিটার্ন তৈরি

আপনার যখন করযোগ্য আয় ও করদায় গণনা এবং দরকারি কাগজপত্র সংগ্রহ হয়ে গেলো তারপর এবার আপনি রিটার্ন তৈরি করুন।

আপনি হয়তো জানেন, কয়েক বছর আগে চাকরিজীবী করদাতাদের জন্য মাত্র তিন পাতার একটি রিটার্ন ফরম চালু হয়েছে। আপনি সেই ফরমে রিটার্ন তৈরি করতে পারেন। তৈরি হয়ে গেলে সব কাগজসহ আপনার ট্যাক্স সার্কেলে জমা দিন।

জমা দেওয়ার পর আপনাকে রিটার্ন প্রাপ্তি স্বীকারপত্র দিবে। সেটাই হলো আপনার রিটার্ন দাখিল করার প্রমাণ। এর মাধ্যমেই আপনার রিটার্ন দাখিলের সমস্ত কাজ সম্পন্ন হয়ে গেলো।

You Might Also Like

error: Content is protected !!